add

সর্বশেষ জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিনোদন খেলাধুলা তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্য ইসলাম শিক্ষা জীবনধারা

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনী প্রস্তাব: শাস্তির বিধান ও বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদন |১৪ আগস্ট ২০২৫,বৃহস্পতিবার 

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এই প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছে—ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদার করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে আনা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। তবে প্রস্তাবের কিছু ধারা মানবাধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, যদি কোনো ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কোনো কনটেন্ট প্রকাশ করেন যা জাতীয় ঐক্য, সার্বভৌমত্ব বা জনশৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে জামিন–অযোগ্য ধারায় মামলা করা যাবে। অর্থাৎ, এই অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে সহজে জামিন পাওয়া যাবে না। প্রযুক্তি ও অধিকারকর্মীদের মতে, এই ধারা প্রয়োগে রাজনৈতিক সমালোচনা বা ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

শুধু ব্যক্তি নয়, এই প্রস্তাবে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকেও দায়ী করার কথা বলা হয়েছে। যেমন—ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (টুইটার) বা অন্য যে কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যদি এমন কনটেন্ট হোস্ট করা হয় এবং সরকার বিটিআরসির মাধ্যমে লিখিতভাবে তা অপসারণের নির্দেশ দেয়, তবে সেই নির্দেশ তাৎক্ষণিকভাবে না মানলে প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষও শাস্তির মুখে পড়বে। প্রস্তাব অনুযায়ী, এই অপরাধে সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা, ৫ বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া যেতে পারে।

প্রস্তাবের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিষয়

সংশোধনী প্রস্তাবে আরও কিছু ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা বর্তমান আইন থেকে ভিন্ন। এর মধ্যে রয়েছে—

  1. ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষমতা বিলুপ্ত: পূর্বে সরকার চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে পারত। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এই ক্ষমতা বাতিলের কথা বলা হয়েছে, যা ডিজিটাল যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

  2. আড়ি পাতার বিষয়ে নতুন নীতি: যোগাযোগে আড়ি পাতার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে নেওয়া হবে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত কর্তৃপক্ষ নয়, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনুমতি লাগবে।

  3. মিথ্যা বা প্রতারণামূলক তথ্যের বিরুদ্ধে শাস্তি: ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো বা প্রতারণামূলক কনটেন্ট প্রচারের ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

  4. ওটিটি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মকে আইনের আওতায় আনা: নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে এই আইনের অধীনে আনতে চাওয়া হয়েছে, যাতে তারা বাংলাদেশি আইন মেনে কনটেন্ট ও তথ্য পরিচালনা করে।

প্রযুক্তি অধিকারকর্মীদের উদ্বেগ

অধিকারকর্মীরা মনে করছেন, প্রস্তাবিত আইনের কিছু ধারা আগের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মতো। বিশেষ করে ৬৬(ক) ধারা—যা জামিন–অযোগ্য রাখা হয়েছে—তা ভবিষ্যতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের মতে, এই ধরনের আইনি কাঠামো রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের হয়রানি এবং অনলাইন স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্য অপব্যবহার হতে পারে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হলে তারা বাংলাদেশের বাজারে সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করতে পারে। এতে দেশীয় ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল সেবা ও ব্যবসার সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আইনের পক্ষে যুক্তি

সরকারি পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই সংশোধনী মূলত জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও উসকানিমূলক কনটেন্টের কারণে সমাজে বিভাজন ও সহিংসতা বাড়ছে। তাই কঠোর আইন ছাড়া এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া, আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে একই ধরনের আইন প্রয়োগ করছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

বিটিআরসির প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনী নিঃসন্দেহে দেশের ডিজিটাল নীতিমালায় একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এতে কিছু ইতিবাচক দিক যেমন—ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষমতা বাতিল বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে আইনের আওতায় আনা—দেখা গেলেও, জামিন–অযোগ্য ধারা ও কঠোর শাস্তির বিধান নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আইনটি পাস হওয়ার আগে নাগরিক সমাজ, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীদের মতামত নেওয়া এবং অপব্যবহার রোধে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায়, এই আইন বাক্‌স্বাধীনতা ও ডিজিটাল অধিকারের ওপর নতুন সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে পারে।


আরও পড়ুন 

খাদ্য মজুদ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে: দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ইতিবাচক সাফল্য

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি টানা দুই বছর নিম্নমুখী, নতুন বাজারে সম্ভাবনা।

তারেক রহমানকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন মির্জা ফখরুল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ