add

সর্বশেষ জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিনোদন খেলাধুলা তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্য ইসলাম শিক্ষা জীবনধারা

যা কেউ কল্পনাও করেনি, সেই ঘটনার বিচার শুরু: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধের মামলা!

 নিজস্ব প্রতিবেদন | ৩ আগস্ট ২০২৫ |রবিবার 

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তার শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল, নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয়েছিল এবং সহিংস দমন অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া গণআন্দোলনের সময় বহু মানুষ নিহত ও আহত হন—যা এই মামলার অন্যতম মূল প্রেক্ষাপট।

দীর্ঘ তদন্তের পর ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে এবং বিচার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেয়। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকার সময় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে ব্যবহার করে গণআন্দোলন দমন করেন, যা বহু নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এসব অভিযানের ফলে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ হতাহত হন, রাজনৈতিক কর্মীরা নিখোঁজ হন এবং বিরোধী মতাবলম্বীদের ওপর ব্যাপক দমন অভিযান চালানো হয়।

বিচার প্রক্রিয়া বর্তমানে অনুপস্থিত অবস্থায় চলছে, কারণ শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আদালতের নথি অনুযায়ী, তাকে একাধিকবার সমন পাঠানো হলেও তিনি আদালতে হাজির হননি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুযায়ী, অভিযুক্ত অনুপস্থিত থাকলেও মামলার শুনানি ও প্রমাণ গ্রহণের প্রক্রিয়া চলতে পারে।

আন্দোলনের পটভূমি
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশজুড়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ‘এক দফা’ দাবিতে আয়োজিত এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল তৎকালীন সরকারের পদত্যাগ ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন। আন্দোলনের সময় বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। অনেক জায়গায় গুলি ছোড়া, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং ব্যাপক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই সময়ে শতাধিক মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হন।

অভিযোগের মূল পয়েন্ট
ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে—

  1. রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার: আন্দোলন দমনে পুলিশ, র‍্যাব ও অন্যান্য বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বিচারে বলপ্রয়োগ।
  2. বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড: বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা ও আহত করা।
  3. নিখোঁজ ও গুম: বিরোধী মতাবলম্বীদের আটক করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যাওয়া ও তাদের কোনো খোঁজ না পাওয়া।
  4. মানবাধিকার লঙ্ঘন: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন, গণমাধ্যমে সেন্সরশিপ এবং রাজনৈতিক কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন।

বিচার নিয়ে প্রতিক্রিয়া
বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকারবিরোধীরা একে ‘ইতিহাসের প্রতিকার’ হিসেবে দেখছেন এবং বলছেন, বহু বছরের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অবশেষে ন্যায়বিচারের পথে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে শেখ হাসিনার সমর্থকরা দাবি করছেন, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এবং এটি দেশের রাজনীতিকে আরও বিভাজিত করবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারের পক্ষে ও বিপক্ষে নানা ধরনের মতামত প্রকাশিত হচ্ছে। কেউ বলছেন, এই বিচার দেশের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে; আবার কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, বিচার যদি পক্ষপাতদুষ্টভাবে পরিচালিত হয়, তবে এটি দেশের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর করবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ ধরনের অভিযোগের বিচার অবশ্যই নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে হওয়া উচিত। তারা উল্লেখ করছে, অতীতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অনেক সময়েই উপেক্ষিত হয়েছে, ফলে জনগণের আস্থা কমেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই মামলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করতে পারে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে এটি ভবিষ্যতে যে কোনো সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সতর্ক করবে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বিচারের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা প্রত্যাশা করেছে যে, আদালত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে রায় দেবে।

আগামী শুনানি
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী সপ্তাহে। সেখানে প্রথম সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, তাদের কাছে শতাধিক সাক্ষীর তালিকা রয়েছে এবং তারা ধাপে ধাপে সাক্ষ্য গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে।

এদিকে প্রতিরক্ষা পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা আদালতে উপস্থিত হলে অভিযোগের জোরালো প্রতিবাদ জানাবেন। তারা বলছেন, আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেবল নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পালন করেছে, কোনো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বা দমননীতি ছিল না।

বাংলাদেশের রাজনীতি, বিচারব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর এই মামলার প্রভাব কতটা গভীর হবে—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এ নিয়ে যে দেশব্যাপী ও বৈশ্বিক আলোচনা শুরু হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে সামনের দিনগুলোতে আরও তীব্র হবে।







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ