নিজস্ব প্রতিবেদক | ৮ আগস্ট ২০২৫, শুক্রবার
চোখে হঠাৎ ব্যথা, ফোলা ভাব কিংবা লালচে দাগ—এমন সমস্যায় অনেকেই হঠাৎ পড়েন এবং বেশ অস্বস্তিকর অনুভব করেন। সাধারণভাবে এই সমস্যাটিকে আমরা ‘আঞ্জনি’ বলে থাকি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম স্টাই (Stye)। যদিও এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, তবে সঠিক সময়ে যত্ন না নিলে চোখের মারাত্মক জটিলতার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
আঞ্জনির কারণ
চিকিৎসকদের মতে, আঞ্জনির অন্যতম প্রধান কারণ হলো Staphylococcus aureus নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। সাধারণত এই জীবাণু চোখের পাপড়ির গোড়ায় থাকা তেল গ্রন্থি বা চুলের ফলিকলে সংক্রমণ ঘটায়। এ সংক্রমণের ফলে ওই জায়গায় প্রদাহ, ব্যথা এবং ফোলা ভাব দেখা দেয়।
তবে শুধু ব্যাকটেরিয়া নয়, কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস ও শারীরিক অবস্থা আঞ্জনির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়—
- অপরিষ্কার হাতে চোখে হাত দেওয়া
- পুরনো বা নোংরা আই মেকআপ ব্যবহার
- ধুলাবালি বা জীবাণু চোখে প্রবেশ করা
- ডায়াবেটিস থাকা
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- দীর্ঘসময় ধরে কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করা, বিশেষত সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে
এ ছাড়া চোখে ঘন ঘন চুলকানো বা অযত্নে থাকা অনেক সময় আঞ্জনি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
আঞ্জনির লক্ষণ
আঞ্জনি হওয়ার পর কয়েকটি সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়—
- চোখের পাপড়ির গোড়ায় ছোট ফুলে ওঠা গুটি
- লালচে ভাব ও ব্যথা
- চোখে পানি আসা
- আলোতে তাকালে অস্বস্তি
- কখনো কখনো চোখের পাতা ফুলে যাওয়া এবং পুঁজ জমা হওয়া
লক্ষণগুলো শুরুতে হালকা হলেও কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত বাড়তে পারে।
আঞ্জনি হলে করণীয়
চোখে আঞ্জনি দেখা দিলে প্রথমেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সাধারণত এটি কয়েক দিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে কিছু সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায় এবং সংক্রমণ কমে আসে।
-
গরম পানির সেঁক
দিনে অন্তত ৩–৪ বার গরম পানিতে ভেজানো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ১০ মিনিট করে চোখে সেঁক দিন। এতে আক্রান্ত স্থানে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, প্রদাহ কমে এবং জমে থাকা পুঁজ সহজে বের হয়ে আসে। -
চোখ পরিষ্কার রাখা
চোখের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত স্যালাইন ওয়াটার বা অ্যান্টিসেপ্টিক ওয়াইপ ব্যবহার করুন। এটি জীবাণুর বিস্তার রোধ করে। -
ব্যথা কমানো
ব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন সেবন করা যেতে পারে। -
মেকআপ থেকে বিরত থাকা
আঞ্জনি পুরোপুরি ভালো না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের আই মেকআপ, বিশেষ করে মাসকারা বা আইলাইনার ব্যবহার করবেন না। -
প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক
যদি আঞ্জনি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, পুঁজ না শুকায় বা ব্যথা অনেক বেড়ে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করুন।
যা এড়িয়ে চলবেন
আঞ্জনির সময় কিছু ভুল অভ্যাস পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। যেমন—
- আঞ্জনি চেপে ফাটানোর চেষ্টা করবেন না; এতে সংক্রমণ চারপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে।
- ময়লা বা অপরিষ্কার হাতে চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- চোখ ভালো না হওয়া পর্যন্ত কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করবেন না।
- অন্যের রুমাল, তোয়ালে বা বালিশ ব্যবহার করবেন না, কারণ এগুলো জীবাণু ছড়িয়ে দিতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
আঞ্জনি প্রতিরোধের জন্য কিছু সচেতনতা মেনে চলা জরুরি—
- প্রতিদিন হাত ভালোভাবে ধোয়া এবং পরিষ্কার রাখা
- আই মেকআপ ব্যবহারের আগে ও পরে ব্রাশ ও অ্যাপ্লিকেটর পরিষ্কার করা
- পুরনো মেকআপ ফেলে দেওয়া (সাধারণত ৩–৬ মাস পর আই মেকআপ বদলানো উচিত)
- ধুলাবালি বা দূষিত পরিবেশে বাইরে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার করা
- ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা
- পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
যদি আঞ্জনি কয়েকদিন পরও না কমে, ফুলে গিয়ে চোখ ঢেকে ফেলে, দৃষ্টিতে সমস্যা হয় বা চোখের আশপাশে ব্যথা ও জ্বর আসে—তাহলে দেরি না করে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। বারবার আঞ্জনি হলে এর পেছনে থাকা অন্যান্য চোখের সমস্যা বা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
আঞ্জনি ছোট একটি সমস্যা মনে হলেও অবহেলা করলে বড় জটিলতায় রূপ নিতে পারে। তাই শুরুতেই সঠিক যত্ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। চোখ আমাদের অন্যতম মূল্যবান অঙ্গ—এটির যত্নে সামান্য সচেতনতা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন
0 মন্তব্যসমূহ