add

সর্বশেষ জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিনোদন খেলাধুলা তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্য ইসলাম শিক্ষা জীবনধারা

বিতর্কিত ভিডিও ফাঁস, বাধ্যতামূলক ছুটিতে বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুল ইসলাম | বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত।

 নিজস্ব প্রতিবেদন |২২ আগস্ট ২০২৫,শুক্রবার 

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক বিতর্কিত ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাঁকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং একই সঙ্গে এ ঘটনার সত্যতা যাচাই ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর ও দুজন নির্বাহী পরিচালক। তাঁদের সহযোগিতা করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা। মূলত ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোর প্রকৃততা যাচাই, অভিযোগের পেছনে কোনো আর্থিক অনিয়ম আছে কি না তা খতিয়ে দেখা এবং দায়িত্বশীল পদে থাকা একজন কর্মকর্তার আচরণ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে কি না তা নির্ধারণ করাই এই কমিটির কাজ।

ঘটনার সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার, যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের একাংশ কর্মচারী গভর্নরের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলো শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং পুরো প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করেছে। একই সঙ্গে অভিযোগ তোলা হয় যে, শাহীনুল ইসলাম নিয়ম বহির্ভূতভাবে এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর একটি স্থগিত ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছিলেন। এ অভিযোগটিকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হিসেবে বিবেচনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরের ও বাইরের মহল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভিডিও ফাঁসের ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটি তদন্ত শুরু করেছে এবং তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কারও ব্যক্তিগত মর্যাদা বা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে নিয়ে হালকাভাবে নেয় না।

বিএফআইইউ হচ্ছে দেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, সন্ত্রাসী অর্থায়ন রোধ এবং সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে। এই সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এ ঘটনায় কেবল স্থানীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

এএফএম শাহীনুল ইসলামকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিএফআইইউ প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক ছিল। জানা যায়, গভর্নরের নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। তবুও নানা প্রেক্ষাপটে তাঁকে এ গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে বিএফআইইউর তৎকালীন প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস আন্দোলনের চাপে পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের পর কয়েক মাস এই পদটি শূন্য ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন, ভিডিও ফাঁস হওয়া ঘটনাই একমাত্র কারণ নয়। বরং দীর্ঘদিন ধরে নেওয়া কিছু প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে স্থগিত হিসাব থেকে বিপুল অর্থ উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ার মতো পদক্ষেপই শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি করেছে। একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, দেশের আর্থিক নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব যার ওপর, তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্তকে নিখুঁত হতে হবে। যদি সেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা অনিয়ম দেখা যায়, তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অর্থনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের আর্থিক খাতের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। তাঁরা বলছেন, শুধু তদন্ত করলেই চলবে না, বরং যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে এমন বিতর্কিত ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে।

বর্তমানে সবার দৃষ্টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের দিকে। অভিযোগ সত্য হলে শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে এবং প্রমাণিত হলে তাঁকে স্থায়ীভাবে দায়িত্ব থেকে সরানো হতে পারে। অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তাঁকে পুনরায় দায়িত্বে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

এই পুরো ঘটনার প্রভাব শুধু একজন কর্মকর্তার ওপর সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে সুনামের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে এভাবে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো নিঃসন্দেহে বড় ঘটনা, যা দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য সতর্ক সংকেত হিসেবে কাজ করবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ