add

সর্বশেষ জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিনোদন খেলাধুলা তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্য ইসলাম শিক্ষা জীবনধারা

দুধের সঙ্গে খেজুর খেলে যেসব উপকার হয় – জানলে অবাক হবেন!

 নিজস্ব প্রতিবেদন | ২ আগস্ট ২০২৫ |শনিবার 

প্রাচীনকাল থেকেই দুধ ও খেজুরকে পুষ্টিকর এবং ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাদ্য হিসেবে ধরা হয়। এই দুটি প্রাকৃতিক উপাদান আলাদাভাবে যেমন উপকারী, একসঙ্গে মিশে গেলে এর উপকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম দুধে কয়েকটি খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার অভ্যাস শরীর ও মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা।

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

খেজুরে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড ও ফেনলিক অ্যাসিড। এসব উপাদান শরীরের কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল থেকে সুরক্ষা দেয়, যা বয়সজনিত রোগ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। দুধে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল এই প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে। ফলে নিয়মিত দুধ-খেজুর গ্রহণ করলে সর্দি-কাশি, জ্বর, সংক্রমণ ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে।

২. যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করে

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ও মিনারেল প্রজনন হরমোনের কার্যকারিতা বাড়ায়। অন্যদিকে দুধ দেহকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম দিয়ে শক্তি জোগায়, যা যৌন স্বাস্থ্যের জন্যও ইতিবাচক। ফলে নিয়মিত এই সংমিশ্রণ গ্রহণ দাম্পত্য জীবনে প্রাণবন্ততা আনে।

৩. ঘুমের মান উন্নত করে

দুধে থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন উৎপাদন বাড়ায়। এগুলো মানসিক চাপ কমিয়ে ঘুমের গভীরতা ও সময় বাড়াতে সহায়তা করে। খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি থাকায় রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে, ফলে রাতের ঘুম ভাঙা বা অস্থিরতা কমে যায়।

৪. হৃৎপিণ্ডের যত্নে

খেজুর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া এটি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বৃদ্ধি করে। দুধের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিয়মিত রাতে দুধ-খেজুর খাওয়ার ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

৫. ত্বকের সৌন্দর্য ও বার্ধক্য প্রতিরোধ

খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং উপাদান, যা ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করে এবং বলিরেখা প্রতিরোধ করে। এতে থাকা ভিটামিন C ও D ত্বককে আর্দ্র ও উজ্জ্বল রাখে। দুধে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সহায়তা করে। ফলে ভিতর থেকে ত্বক পুষ্টি পায় এবং বাইরের দিক থেকেও তরুণ দেখায়।

৬. হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর

খেজুরে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়ায়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমে যায়। দুধে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, যা হজমশক্তি বাড়ায়।

৭. ডায়াবেটিস ও স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ

যদিও খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে, তবে এটি লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত, অর্থাৎ রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়ায় না। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূতি দেয়, যা অতিরিক্ত খাওয়া কমায়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

৮. ক্যানসার ও আলসার প্রতিরোধে ভূমিকা

খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেটের ক্যানসার, কোলন ক্যানসার ও আলসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন কোষের গঠন মজবুত রাখে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

৯. শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি

দিনভর কাজের চাপ বা ক্লান্তি দূর করতে দুধ-খেজুরের জুড়ি নেই। খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ দ্রুত শক্তি জোগায়। দুধের প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট শরীরকে দীর্ঘসময় শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে সকালের নাস্তা বা রাতের খাবারের পর এটি আদর্শ এনার্জি ড্রিঙ্ক হিসেবে কাজ করে।

১০. রক্তস্বল্পতা দূর করে

খেজুর ও দুধ—উভয়েই আয়রনে সমৃদ্ধ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১০ দিন নিয়মিত দুধে খেজুর মিশিয়ে খেলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত হয়।


দুধ-খেজুর তৈরির সঠিক পদ্ধতি

১. রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ নিন।
2. এতে ২–৩টি ভালো মানের খেজুর দিয়ে ৫–১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন (কিংবা সকালে খাওয়ার জন্য সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে পারেন)।
3. চাইলে খেজুরের বিচি ফেলে দিয়ে ছোট টুকরা করে মিশিয়ে নিন।
4. গরম গরম খেয়ে নিন অথবা সকালে নাশতায় গ্রহণ করুন।

দুধ ও খেজুরের সমন্বয় একটি প্রাকৃতিক পুষ্টিবোমা—যা একই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, শক্তি, ঘুমের মান, ত্বকের সৌন্দর্য ও হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে। ব্যস্ত জীবনে সহজে পাওয়া যায় এমন এই দুই উপাদানকে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর ও মন উভয়ই সুস্থ থাকবে। তাই আজ থেকেই এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস শুরু করুন এবং নিজের ও পরিবারের সুস্থতার জন্য এক গ্লাস দুধে কয়েকটি খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার রুটিন গড়ে তুলুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ