ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলেন উমামা ফাতেমা

 নিজস্ব প্রতিবেদন |২৬ আগস্ট ২০২৫,মঙ্গলবার 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে নানা আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে আলোচনায় এসেছেন সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী উমামা ফাতেমা। নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাতে উমামা ফাতেমা তার এক বান্ধবীর সঙ্গে রোকেয়া হলে প্রবেশ করেছিলেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ছাত্রী তার নিজস্ব হলে না থেকে অন্য হলে অবস্থান করতে পারেন না। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। কেউ দাবি করতে থাকেন, তিনি রাত দেড়টার পর হলে প্রবেশ করেছেন। তবে উমামা ফাতেমা এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, রাত দশটার মধ্যেই হলে প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু তাকে বিতর্কিত করার জন্য অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ধারণা করেন, উমামা নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে রোকেয়া হলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানান, সে রাতে তার কোনো ধরনের প্রচারণার পরিকল্পনা ছিল না। ব্যক্তিগত কারণেই তিনি হলে গিয়েছিলেন। রাত গভীর হওয়ার পর গুজব ছড়ানো শুরু হলে তিনি নিজেই প্রাধ্যক্ষকে ফোন করে পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করেন এবং নিয়ম ভঙ্গের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চান।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া লিখিত আবেদনে উমামা ফাতেমা শুধু ক্ষমাই চাননি, বরং একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন। তার মতে, জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের অন্য হলে প্রবেশ করার সুযোগ থাকা উচিত। এজন্য বিশেষ অনুমতি ও বৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক ছাত্রীকে রাত দশটার মধ্যে নিজ হলে প্রবেশ করতে হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুমতি থাকলে রাত বারোটার মধ্যে হলে ঢোকার সুযোগ রয়েছে। তবে অন্য হলে প্রবেশের কোনো অনুমতি নেই। তাই উমামার রোকেয়া হলে যাওয়া সরাসরি নিয়ম ভঙ্গ হিসেবেই ধরা হয়েছে।

ঘটনার ব্যাখ্যায় উমামা ফাতেমা বলেন, তিনি কোনো গোপন উদ্দেশ্যে রোকেয়া হলে যাননি। রাত সাড়ে তিনটার দিকে যখন জানতে পারেন, তাকে নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তখনই প্রাধ্যক্ষকে ফোন করে বিষয়টি পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে সেটা তিনি স্বীকার করেছেন এবং এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রশাসন ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় অনুমতি সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের অন্য হলে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে ভেবে দেখবে।

ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতিটি প্রার্থীর পদক্ষেপ এখন শিক্ষার্থীদের নজরে। তাই রোকেয়া হলের ঘটনাটি নিয়েও তুমুল আলোচনা তৈরি হয়েছে। অনেকের মতে, উমামার প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তবে অন্যরা মনে করছেন, তিনি যেভাবে দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন, সেটি ইতিবাচক উদাহরণ।

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। কেউ বলছেন, ভিপি পদপ্রার্থী হিসেবে উমামার আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। অন্যরা মনে করছেন, ভুল হওয়ার পর সেটি স্বীকার করার সাহসই তাকে আলাদা করেছে। একজন শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, “নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় সৎ থাকা সবচেয়ে জরুরি। উমামা ফাতেমা যে সরাসরি ক্ষমা চেয়েছেন, সেটি প্রশংসনীয়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে শৃঙ্খলার বিষয়টি সবসময় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। তাই এ ঘটনা সাধারণ নিয়ম ভঙ্গ হলেও নির্বাচনী সময় হওয়ায় তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। উমামা ফাতেমা লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টিকে কীভাবে নেয় এবং নির্বাচনী পরিবেশে এ ঘটনার কতটা প্রভাব পড়ে।


আরও পড়ুন

১.১৫ বছর বিএনপির জন্য লড়েছি, অথচ আজ তারাই আমাকে ধাক্কা দিল: রুমিন ফারহানা

২.ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন: সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন পরিবেশ উপদেষ্টা

৩.খাদ্য মজুদ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে: দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ইতিবাচক সাফল্য


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ