নিজস্ব প্রতিবেদক |১০ আগস্ট ২০২৫,রবিবার
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই ঘনবসতিপূর্ণ শহরে লাখ লাখ মানুষ বসবাস করেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজায় যুদ্ধের তীব্রতা এমনিতেই বেড়েছে, আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সংঘাত আরও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ, সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে জীবিত বা মৃত উদ্ধার, গাজা উপত্যকার বেসামরিক এলাকার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, এবং ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এছাড়া, হামাস বা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে বাদ দিয়ে একটি বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, পুরো গাজা উপত্যকা দখলের চূড়ান্ত পরিকল্পনা রয়েছে, তবে প্রথম ধাপে কেবল গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনার প্রধান ধাপগুলো
১. হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করা। ২. সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা, জীবিত বা মৃত। ৩. গাজা উপত্যকার গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া। ৪. ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো স্থাপন। ৫. হামাস ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে বাদ দিয়ে বিকল্প প্রশাসন গঠন।
আইডিএফ (ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স) জানিয়েছে, তারা গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য সামরিকভাবে প্রস্তুত এবং বেসামরিকদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে অভিযান শুরুর আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। বর্তমানে গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, আর ৮৬ শতাংশ অঞ্চলে হয় সামরিক অভিযান চলছে, নয়তো লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কেন গাজা শহর?
নেতানিয়াহুর মতে, গাজা শহর কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এটি শুধু প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, বরং এখানে হামাসের বহু সামরিক স্থাপনা ও যোগাযোগ কেন্দ্র রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের। গাজা শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলে পুরো উপত্যকার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা অনেক সহজ হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
ইসরায়েলের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “এটি রক্তপাত আরও বাড়াবে এবং শান্তির সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করবে।” প্যালেস্টাইনের নেতারা এই পদক্ষেপকে সরাসরি “যুদ্ধাপরাধের ঘোষণা” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তুরস্ক, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং জাতিসংঘ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, “যে কোনো সামরিক পদক্ষেপ অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে। গাজার বেসামরিক জনগোষ্ঠী ইতোমধ্যেই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।”
জিম্মিদের পরিবারের উদ্বেগ
জিম্মিদের পরিবারের ফোরাম এই পরিকল্পনাকে “অত্যন্ত বিপদজনক” বলে মন্তব্য করেছে। তাদের দাবি, সামরিক অভিযান চলাকালীন জিম্মিদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং নিরাপদে ফেরত আনার সম্ভাবনা কমে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের টানাপোড়েন
সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে এ নিয়ে উত্তপ্ত কথাবার্তা হয়েছে। যদিও দুই পক্ষই প্রকাশ্যে এই দাবি অস্বীকার করেছে, তবে কূটনৈতিক মহল বলছে, ওয়াশিংটন গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযানের পরিবর্তে রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে।
সামনে কী হতে পারে
গাজা শহর দখলের সময়সীমা এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ একদিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাড়াতে পারে, তবে অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করতে পারে। মানবিক সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম কার্যকরভাবে না হলে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে।
গাজা সংকট এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে সামরিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। বিশ্বের বহু দেশই আশা করছে, সংঘাতের বদলে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হবে—কিন্তু ময়দানের পরিস্থিতি বলছে, আপাতত যুদ্ধের মেঘ আরও ঘন হচ্ছে।
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের হুমকি আমলে নিচ্ছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট।
তারেক রহমানকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন মির্জা ফখরুল।
সুষ্ঠু নির্বাচনের উপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার।
0 মন্তব্যসমূহ