add

সর্বশেষ জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিনোদন খেলাধুলা তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্য ইসলাম শিক্ষা জীবনধারা

৫ আগস্টের ঢাকায় ইতিহাসের মোড় ঘোরানো দিন: কারফিউ ভেঙে রাজপথে জনতার জোয়ার

  নিজস্ব প্রতিবেদন | ৫ আগস্ট  ২০২৫ | মঙ্গলবার 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, সোমবার, রাজধানী ঢাকা ছিল চরম উত্তেজনা এবং নাটকীয়তার কেন্দ্রবিন্দু। সকাল থেকেই সরকার শহরে কারফিউ জারি করেছিল, অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল তাদের ‘এক দফা’ দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি শুরু করে। সকাল শুরু হতেই রাজধানীর মূল সড়ক, প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসানো হয় এবং বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। কারফিউ পাস থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়।

ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথ যেমন গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও আব্দুল্লাহপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। অভ্যন্তরীণ গলিগুলোতেও পুলিশ অবস্থান নেন এবং মাইকিং করে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেন। তবে সকাল যত গড়ায়, পরিস্থিতি ততই উত্তপ্ত রূপ নেয়।

সকাল ১০টার পর থেকে তরুণ-তরুণীরা দলবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামে। উত্তরা থেকে শুরু হওয়া মিছিল ধীরে ধীরে গণভবনের দিকে এগোতে থাকে। হাতে ছিল লাঠি ও জাতীয় পতাকা। ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল এগোতে থাকে। নিরাপত্তা বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও বিক্ষোভ থামাতে পারেনি। শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ মিছিলে অংশ নেন এবং উচ্চকণ্ঠে স্লোগান তোলে—"এক দফা, এক দাবি—পদত্যাগ চাই এখনই!" দুপুরের মধ্যভাগে মিছিল একাধিক ব্যারিকেড অতিক্রম করে শহরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ এলাকায় সকাল থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কয়েকশো শিক্ষার্থী জড়ো হতে শুরু করে। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একই সময়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। দুপুরের দিকে শাহবাগ মোড়ে শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। পুলিশের চাপের মুখে তারা পিছু হটে এবং থানার আশেপাশে অবস্থান নেয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল এসে শাহবাগে মিলিত হয়, যা উত্তাল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

সকাল ১১টার পর মোবাইল এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। রামপুরা ও বনশ্রী এলাকা নতুন উত্তপ্ত কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। বিভিন্ন গলি থেকে মিছিল এসে রামপুরা ব্রিজে জমায়েত হয়। পুলিশের পিছু হটার পরে সেনা সদস্যরা উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানায় এবং সম্ভাব্য সুখবরের ইঙ্গিত দেয়। এই সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সম্ভাব্য পদত্যাগের খবর। দুপুর ২টার দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের সম্ভাব্য টেলিভিশন ভাষণের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুরের পর শহরে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে—প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। বিকেল ৩টার দিকে নিরাপত্তা বাহিনী সরিয়ে নিলে হাজার হাজার মানুষ গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে। কোথাও কোথাও ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। অনেকে জাতীয় পতাকা হাতে আনন্দ প্রকাশ করে।

এছাড়া বিক্ষোভ সংসদ ভবন এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের কার্যালয়, বিভিন্ন থানাসমূহ এবং নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিজয় সরণীতে বঙ্গবন্ধুর একটি প্রতিকৃতি ভেঙে ফেলা হয়। এ দৃশ্য দেখার সঙ্গে সঙ্গে শহরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

সারাদিনের উত্তেজনার পর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মানুষের ঢল নামে। স্লোগান, বাঁশি, রঙ ছিটানো ও উল্লাসে রাজপথ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। লাখো মানুষ এই দিনটিকে এক নতুন যুগের সূচনার প্রতিচ্ছবি হিসেবে মনে করে। রাজধানী ঢাকা ছিল এই উত্তেজনা, আন্দোলন এবং আনন্দের মিলনক্ষেত্র। দিনটি ইতিহাসে একটি পরিবর্তনের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়, যখন জনগণ তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য একত্রিত হয় এবং শক্তভাবে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ