নিজস্ব প্রতিবেদন | ৯ আগস্ট ২০২৫, শনিবার
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাট হাতে বিরল ও ঐতিহাসিক এক রেকর্ড গড়েছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের মাত্র ১২৫ রানে অলআউট করার পর কিউই ব্যাটাররা রীতিমতো রানের ঝড় তুলেছে। এর মধ্য দিয়ে টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো এক ইনিংসে তিন ব্যাটার দেড়শ রানের বেশি ইনিংস খেলেছেন। প্রায় চার দশক ধরে দেখা যায়নি এমন ঘটনা শুক্রবার ঘটাল কিউইরা।
ম্যাচের শুরু থেকেই জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং ব্যর্থতা অতিথিদের হাতে বড় সুযোগ এনে দেয়। প্রথম দিনেই জিম্বাবুয়ে মাত্র ১২৫ রানে গুটিয়ে যায়। কিউই বোলাররা দারুণ শৃঙ্খলাপূর্ণ বোলিং করেন, যেখানে পেস ও স্পিন—দুটো বিভাগই কার্যকর ভূমিকা রাখে। ছোট পুঁজি হাতে পাওয়ায় কিউই ওপেনাররা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে নামেন।
ওপেনিং জুটিতে ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়াং গড়ে তোলেন ১১৫ রানের শক্ত ভিত। ইয়াং ৭৪ রানে থামলেও, কনওয়ে তার ইনিংসকে রূপ দেন দারুণ এক শতকে। ২৪৫ বল মোকাবেলায় ১৮টি চারের মারে ১৫৩ রান করেন এই বাঁহাতি ওপেনার। তার শট সিলেকশন ও ধৈর্যপূর্ণ ব্যাটিং ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
কনওয়ের বিদায়ের পর মাঠে নামেন রাচিন রবীন্দ্র। শুরু থেকেই তিনি আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন। ১৩৯ বলে ২১টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ১৬৫ রান করেন এই তরুণ অলরাউন্ডার। স্ট্রাইক রোটেশন ও উইকেটের দুই পাশে শট খেলার দক্ষতা তার ইনিংসকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
অন্যপ্রান্তে ছিলেন অভিজ্ঞ হেনরি নিকোলস। ধীরগতিতে শুরু করলেও ধীরে ধীরে তিনি নিজের ইনিংসকে বড় আকার দেন। ২৪৫ বল খেলে ১৫টি চারের মারে ১৫০ রানে অপরাজিত আছেন তিনি। রবীন্দ্র ও নিকোলসের জুটি দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থাকে। তারা মিলে গড়ে তোলেন ২৫৬ রানের অপরাজিত পার্টনারশিপ, যা নিউজিল্যান্ডকে বিপুল লিড এনে দেয়।
দিনের শেষে নিউজিল্যান্ড ৩ উইকেটে ৬০১ রানে পৌঁছে যায়। ফলে প্রথম ইনিংসে তাদের লিড দাঁড়ায় বিশাল ৪৭৬ রানে, যা প্রতিপক্ষকে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে।
এবার আসা যাক রেকর্ডের কথায়। টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে মাত্র দুইবার একই ইনিংসে তিন ব্যাটার দেড়শ রানের বেশি ইনিংস খেলেছিলেন। প্রথমটি ১৯৩৮ সালে, যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা এই কীর্তি গড়েন। এরপর ১৯৮৬ সালে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা পুনরায় এই সাফল্য অর্জন করেন। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা তৈরি করেছিল তৎকালীন সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড।
প্রায় ৩৯ বছর পর নিউজিল্যান্ড এই বিরল তালিকায় নাম লিখিয়েছে। তিনজন ব্যাটারের দেড়শ পেরোনো ইনিংস শুধু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিক থেকে নয়, দলীয় আধিপত্যেরও প্রতীক। টেস্ট ক্রিকেটে বড় স্কোর গড়তে হলে দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকতে হয়, স্ট্রাইক রোটেট করতে হয় এবং ভুল কম করতে হয়—যা কিউই ব্যাটাররা নিখুঁতভাবে করেছেন।
এই ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ছিল পরিকল্পিত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ। কনওয়ে ছিলেন ইনিংসের ভিত্তি নির্মাতা, ইয়াং দিয়েছেন প্রয়োজনীয় গতি, আর রবীন্দ্র-নিকোলস জুটি প্রায় প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। জিম্বাবুয়ের বোলাররা চেষ্টা করলেও উইকেট নিতে ব্যর্থ হয়েছে নিয়মিত ব্যবধানে, যা এই বিশাল স্কোরের অন্যতম কারণ।
এত বড় লিড পাওয়ার পর ম্যাচের ফলাফল নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জিম্বাবুয়েকে এখন শুধু বড় পরাজয় এড়াতে হলে ব্যাট হাতে অসাধারণ কিছু করতে হবে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে সেটা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন।
এ ম্যাচ শুধু স্কোরবোর্ডের দিক থেকে নয়, পরিসংখ্যানের খাতায়ও বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কারণ, এক ইনিংসে তিন ব্যাটারের দেড়শ পেরোনো ইনিংস প্রমাণ করে টেস্ট ক্রিকেটে এখনো ধৈর্য, দক্ষতা ও পরিকল্পনার জায়গা আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কিউইদের এই ইনিংস টেস্ট ক্রিকেটের ভক্তদের কাছে দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো এক অধ্যায় হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ থেকে কারা থাকবেন আম্পায়ার হিসেবে?
নারী ফুটবলে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপ ২০২৫ এর আগে ডাচদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ
0 মন্তব্যসমূহ