নিজস্ব প্রতিবেদক |৯ আগস্ট ২০২৫,শনিবার
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন — এমন ঘোষণা দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (তারিখ) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)–এর জাতীয় কাউন্সিলে তিনি এই ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। প্রবাসে থেকেও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতেই মির্জা ফখরুল তারেক রহমানকে দলের ‘ভবিষ্যৎ নেতা ও কাণ্ডারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা ও কাণ্ডারি আজ এখানে উপস্থিত আছেন। তিনি কেবল রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, পেশাগতভাবেও যোগ্য একজন ব্যক্তি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, দেশকে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক পথে ফিরিয়ে আনতে তারেক রহমানই সবচেয়ে উপযুক্ত নেতৃত্ব দিতে পারবেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা হবে।”
ওষুধ শিল্পের সংকটের কথা তুলে ধরা
বক্তব্যে মির্জা ফখরুল দেশের ওষুধ শিল্পের বর্তমান সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার মতে, সরকারের ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে এই খাত এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। “দেশের ওষুধ শিল্প একসময় আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম কুড়িয়েছিল। কিন্তু এখন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, নীতি-সহায়তার অভাব এবং দুর্নীতির কারণে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে,” তিনি উল্লেখ করেন।
কাউন্সিলে উপস্থিত নেতারা
ড্যাবের এই জাতীয় কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ডা. ইসমাইল জবিহউল্লাহ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
সভায় বক্তারা স্বাস্থ্যখাতের নানা সমস্যা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বৈষম্য বেড়েছে। গ্রামীণ পর্যায়ে পর্যাপ্ত ডাক্তার ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন। ড্যাবের পক্ষ থেকে এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
নেতৃত্ব নির্বাচনের ভোটগ্রহণ
অধিবেশন শেষে বিকেল ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ড্যাবের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশ নেয় — ‘আজিজ-শাকুর’ প্যানেল এবং ‘হারুন-শাকিল’ প্যানেল। এছাড়া সভাপতি পদে স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ওবায়দুল কবির। ভোটগ্রহণ শেষে রাতের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ড্যাবের নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দেন যে, তারা চিকিৎসকদের পেশাগত অধিকার রক্ষায় ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা পালন করবেন।
প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক গুরুত্ব
তারেক রহমান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং ২০০৮ সাল থেকে তিনি দেশে ফেরেননি। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরেই মনে করছে, তারেক রহমানকেই ভবিষ্যতে দলের প্রধান নেতৃত্বে আনতে হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছে। দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত দিয়েছে, যার মধ্যে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন অন্যতম। মির্জা ফখরুলের এই ঘোষণা বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও নির্বাচনী রণনীতির একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য শুধু দলীয় কর্মীদের উদ্দীপ্ত করার জন্য নয়, বরং আগামী নির্বাচনের আগে দলীয় অভ্যন্তরে নেতৃত্বের প্রশ্নে অনিশ্চয়তা দূর করার কৌশলও হতে পারে। তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া বিএনপির সমর্থক ঘাঁটিকে সুসংহত করতে পারে, তবে একই সঙ্গে এটি রাজনৈতিক বিতর্কও উসকে দিতে পারে।
ড্যাবের জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা নতুন নেতৃত্ব পেয়েছেন, আর মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাও স্পষ্ট হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, আগামী নির্বাচনের আগে এই ঘোষণার রাজনৈতিক প্রভাব কতটা কার্যকর হয় এবং তা দলীয় সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মনেও কতটা সাড়া জাগায়।
আরও পড়ুন
সুষ্ঠু নির্বাচনের উপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার।
এক বছর পর জুলাই অভ্যুত্থান: গণতন্ত্র কতটা এগোলো?
জুলাই ঘোষণাপত্রে পক্ষপাত ও ইতিহাস বিকৃতি: বার্গম্যানের সমালোচনা
0 মন্তব্যসমূহ