নিজস্ব প্রতিবেদন | ৮ আগস্ট ২০২৫| শুক্রবার
এশিয়া কাপ ২০২৫ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সব ধরনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। অবশেষে সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে এবারের আসরের পূর্ণাঙ্গ সূচি, যেখানে খেলার সময় ও ভেন্যুর তালিকাও যুক্ত করা হয়েছে। ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, এবারের টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। মরুভূমির দেশে ক্রিকেটের এই মহাযজ্ঞ বসতে যাচ্ছে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে, আর ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ। পুরো আয়োজন জুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষা করছে রোমাঞ্চকর লড়াই ও জমজমাট আসর।
এবারের এশিয়া কাপের অন্যতম আকর্ষণ বাংলাদেশ দল। ড্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ পড়েছে ‘বি’ গ্রুপে, যেখানে তাদের সঙ্গী হিসেবে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হংকং। এই গ্রুপের সব ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে আবুধাবির বিখ্যাত শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মর্যাদাপূর্ণ এই ভেন্যুটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরেই একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে রেখেছে। সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও মনোরম পরিবেশের কারণে এখানে খেলার অভিজ্ঞতা সবসময়ই বিশেষ কিছু হয়ে থাকে। এবারের আসরেও সেই অভিজ্ঞতা নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
সূচি অনুযায়ী, গ্রুপ ‘বি’-এর মোট ছয়টি ম্যাচের সবকটিই হবে আবুধাবিতে। এটি বাংলাদেশ দলের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা হিসেবেও দেখা যেতে পারে, কারণ একটি মাঠে ধারাবাহিকভাবে খেলার ফলে খেলোয়াড়রা উইকেট ও কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে। মরুভূমির আবহাওয়ায় বিকেল ও রাতে খেলার অভিজ্ঞতা যেকোনো দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যেখানে শিশির, বায়ুর গতি ও গরমের মতো বিষয়গুলো ম্যাচের ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ, প্রতিপক্ষ ও ম্যাচের সময়সূচি ঘোষণার পর থেকেই দেশজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সবাই অপেক্ষা করছে কেমন পারফরম্যান্স করবে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচগুলো ঐতিহাসিকভাবেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াই সবসময়ই এক ধরনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করে, আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে থাকে ভিন্ন ধরণের কৌশলগত চাপ। হংকং যদিও তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী দল, তবুও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চমক দেখানোর ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তাই বাংলাদেশের জন্য প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে।
এদিকে শুধু খেলোয়াড়দের নাম নয়, এবারের আসরে কারা থাকবেন আম্পায়ার হিসেবে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। টুর্নামেন্টের ন্যায্যতা ও মান বজায় রাখতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ আম্পায়ার নিয়োগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। জানা গেছে, এসিসি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে দুইজন আম্পায়ারের নাম চেয়েছে। বিসিবিও এই অনুরোধে সাড়া দিয়েছে এবং সম্ভাব্য দুইজন আম্পায়ারের নাম প্রায় চূড়ান্ত করেছে। সূত্র মতে, তালিকায় উঠে এসেছে মাসুদুর রহমান মুকুল এবং গাজী সোহেলের নাম। এই দুজনই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিজ্ঞ আম্পায়ার হিসেবে পরিচিত এবং পূর্বে বহু বড় ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মাসুদুর রহমান মুকুল দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করছেন এবং একাধিক আইসিসি ইভেন্টে তার উপস্থিতি ছিল। গাজী সোহেলও দেশের অন্যতম শীর্ষ আম্পায়ার, যিনি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের উপস্থিতি শুধু বাংলাদেশকেই নয়, পুরো টুর্নামেন্টকেই আরও সমৃদ্ধ করবে। খুব শিগগিরই এসিসি আম্পায়ারদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।
এই টুর্নামেন্ট শুধু ক্রিকেটীয় দক্ষতার প্রতিযোগিতা নয়, বরং এশিয়ার ক্রিকেট সংস্কৃতির একটি বড় উদযাপনও বটে। সংযুক্ত আরব আমিরাত আগেও একাধিকবার বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে আইপিএল-এর কিছু মৌসুম, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং পূর্ববর্তী এশিয়া কাপ। নিরাপদ পরিবেশ, বিশ্বমানের অবকাঠামো এবং দর্শকদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের কারণে ইউএই এখন ক্রিকেটের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। এবারের আয়োজনেও দর্শকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন সুবিধা, যেমন সহজ টিকিট ব্যবস্থা, অনলাইন বুকিং, স্টেডিয়ামের ভেতরে আরামদায়ক আসন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা।
বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের জন্যও সুখবর হলো—ইউএইতে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি সরাসরি স্টেডিয়ামে গিয়ে ম্যাচ উপভোগ করার সুযোগ পাবেন। প্রবাসী সমর্থকদের উল্লাস ও সমর্থন খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ইউএইতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশ দল প্রায় সবসময়ই দর্শক সমর্থনের দিক থেকে এগিয়ে থাকে।
সব মিলিয়ে, এশিয়া কাপ ২০২৫ শুধু একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়, বরং এশিয়ার সেরা দলগুলোর দক্ষতা, কৌশল ও মানসিক শক্তির বড় এক পরীক্ষা। বাংলাদেশ দল, তাদের সমর্থক এবং পুরো ক্রিকেট বিশ্ব এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ৯ সেপ্টেম্বরের সেই প্রথম বলের জন্য, যা শুরু করে দেবে এশিয়ান ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসরের আরেকটি নতুন অধ্যায়। যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়, তাহলে এবারের আসর হয়ে উঠতে পারে এক স্মরণীয় আয়োজন, যেখানে উত্তেজনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ক্রিকেটের সৌন্দর্য একসঙ্গে মিশে যাবে মরুর বুকে।
আরও পড়ুন
নারী ফুটবলে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপ ২০২৫ এর আগে ডাচদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ
CHAN 2024 Football: কেনিয়া, তানজানিয়া ও উগান্ডায় ৩০ দিনের ফুটবলযুদ্ধ
0 মন্তব্যসমূহ