তথ্য প্রযুক্তির খারাপ দিক: অন্ধকার দিক উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক |৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫|

আধুনিক বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তি মানুষের জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন এনেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বিনোদন—সব ক্ষেত্রে এর ইতিবাচক প্রভাব সুস্পষ্ট। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রযুক্তির যেমন উজ্জ্বল দিক আছে, তেমনি আছে এক অন্ধকার দিকও। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খারাপ দিকগুলোকে যদি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে তা সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিজীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রথমত, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ রাখার কারণে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, অনেকেই ক্রমাগত বসে কাজ করার ফলে মেরুদণ্ড ও ঘাড়ের ব্যথায় ভুগছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একাকীত্ব, হতাশা এবং মানসিক অবসাদ এখন অনেক তরুণ-তরুণীর নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে।

দ্বিতীয়ত, তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য, গুজব এবং বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে। অনেক সময় এসব গুজব মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং কখনো কখনো তা বড় ধরনের সহিংসতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশু-কিশোররা এই ভুয়া খবরের সহজ শিকার হচ্ছে, যার ফলে তাদের চিন্তাভাবনা ও সামাজিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তৃতীয়ত, প্রযুক্তির কারণে সাইবার অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। ব্যাংকিং খাতে হ্যাকিং, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, অনলাইন প্রতারণা, ফিশিং, এমনকি পরিচয় চুরির মতো অপরাধ আজকাল প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় বড় প্রতিষ্ঠানও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার সিকিউরিটি জোরদার না করলে ভবিষ্যতে এর ক্ষতিকর প্রভাব আরও বাড়বে।

চতুর্থত, প্রযুক্তির আসক্তি তরুণ সমাজকে পড়াশোনা থেকে বিমুখ করছে। অনেকেই দিন-রাত সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও গেম কিংবা অনলাইন কনটেন্টে সময় কাটাচ্ছেন। এতে করে পড়াশোনায় মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কও দুর্বল হয়ে পড়ছে। বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ কমে যাচ্ছে, যা সামাজিক বন্ধনকে ভেঙে দিচ্ছে।

পঞ্চমত, তথ্য প্রযুক্তি মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই চাকরির সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষ করে যারা স্বল্প শিক্ষিত বা কম দক্ষ, তারা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন। ফলে প্রযুক্তি অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতি রোধ করা সম্ভব নয় এবং তা রোধ করা উচিতও নয়। তবে এর খারাপ দিকগুলো মোকাবিলা করা জরুরি। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা, সাইবার আইন কার্যকর করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় রাখা।

সবশেষে বলা যায়, তথ্য প্রযুক্তি মানবসভ্যতার জন্য আশীর্বাদ হলেও এর নেতিবাচক প্রভাবকে উপেক্ষা করলে তা অভিশাপে পরিণত হতে পারে। তাই প্রয়োজন সঠিক ও সচেতন ব্যবহার, যাতে প্রযুক্তি সত্যিকার অর্থেই মানবকল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারে।



আরও পড়ুন

১.Xiaomi Redmi Note 15 Pro+ 5G: নতুন রাজা আসছে স্মার্টফোন দুনিয়ায়!

2.হঠাৎ বদলে যাচ্ছে মোবাইলের ডায়াল প্যাড, জানুন কারণ

৩.iPhone 15 Pro Max: প্রযুক্তিতে শীর্ষে, দামে সাধারণের নাগালের বাইরে


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ