add

সর্বশেষ জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিনোদন খেলাধুলা তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্য ইসলাম শিক্ষা জীবনধারা

বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং প্রস্তাব: ৪০০ কোটি টাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদন |১৮ আগস্ট ২০২৫,সোমবার 

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) আবারও উঠে এসেছে ভয়ংকর এক দুর্নীতির অভিযোগ। স্পট ফিক্সিং তদন্তে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—একটি ম্যাচ ইচ্ছাকৃতভাবে হারার বিনিময়ে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ৪০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছিল আন্তর্জাতিক বেটিং চক্র। যদিও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তারা প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছিল কি না। কিন্তু বিস্ময়করভাবে, সংশ্লিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজি বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দুর্নীতি দমন ইউনিটকে জানায়নি এবং শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচে তারা হেরে যায়। এতে স্বাভাবিকভাবেই বড় প্রশ্ন উঠেছে।

তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন

বিপিএলের সর্বশেষ আসর (২০২৪-২৫) নিয়ে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যেই প্রাথমিক রিপোর্ট প্রায় শেষ করেছে। সাবেক বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই কমিটি কয়েক মাস ধরে বিপুল পরিমাণ তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। তারা ৩০০ ঘণ্টারও বেশি অডিও কথোপকথন শুনেছেন এবং প্রায় তিন হাজার পৃষ্ঠার নথি বিশ্লেষণ করেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই রিপোর্ট বিসিবি সভাপতির হাতে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শুধুমাত্র সর্বশেষ আসরেই নয়, বরং গত পাঁচটি বিপিএল আসরে মিলিয়ে ১৪০টির বেশি সন্দেহজনক ঘটনার খোঁজ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় ও বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৬০ জন ক্রিকেটারের নাম এসেছে।

৩৬টি সন্দেহজনক ঘটনার খোঁজ

তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত ৩৬টি ঘটনার মধ্যে স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে, যেখানে খেলার ফলাফল বা পারফরম্যান্স প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। এই তালিকায় উঠে এসেছে ১০-১২ জন ক্রিকেটারের নাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন জাতীয় দলের বর্তমান সদস্যও রয়েছেন। একজন পেসার এবং একজন অফস্পিনারকে “হাই ফ্ল্যাগড” তালিকায় রাখা হয়েছে, অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহ তুলনামূলক বেশি। শুধু তাই নয়, সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে থাকা একজন ক্রিকেটার ও একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচের নামও এসেছে তদন্তে।

তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে—দুর্বার রাজশাহী, সিলেট স্ট্রাইকার্স এবং ঢাকা ক্যাপিটালস। এই তিন দলের সাথে জুয়াড়িদের যোগাযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানা গেছে।

সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানও সন্দেহের তালিকায়

তদন্তে আরও একটি নতুন বিষয় উঠে এসেছে, যা আগে তেমন গুরুত্ব পায়নি। অভিযোগ রয়েছে, টেলিভিশন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু অংশও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। সম্প্রচারের সময় অনলাইন বেটিংয়ের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, যার মাধ্যমে তারা ১৭০ থেকে ১৮০ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করেছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, কিছু সন্দেহভাজন এজেন্টকে করপোরেট বক্সে বসিয়ে ম্যাচ দেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এতে স্পষ্ট হয় যে, কেবল মাঠেই নয়, বরং ম্যাচ সম্প্রচারেও দুর্নীতির প্রভাব পড়েছে।

ক্রিকেটারদের সংশ্লিষ্টতা

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা সরাসরি ম্যাচের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে শুধু দেশি নয়, বিদেশি খেলোয়াড়ও রয়েছেন। কয়েকজন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় বিপিএলের বিভিন্ন দলে খেলার সময় জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এর ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তদন্তকারীরা বলছেন, ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে না, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা প্রমাণ লুকিয়ে রাখতে পেরেছেন। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড, অর্থ লেনদেনের তথ্য এবং সাক্ষীর বয়ান কমিটির হাতে এসেছে, যা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

নতুন সুপারিশ আসছে

রিপোর্টে বিসিবিকে দুর্নীতি দমন ইউনিটকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেওয়া হবে। এখনকার ইউনিটকে অকার্যকর হিসেবে বর্ণনা করেছে তদন্ত দল। তারা মনে করছে, নতুন করে একটি শক্তিশালী ইউনিট গঠন করা প্রয়োজন, যেখানে আইটি বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় থাকবে।

পাশাপাশি, অনলাইন বেটিং নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইন সংস্কার বা নতুন আইন প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে। বর্তমানে আইন দুর্বল হওয়ায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যদি নতুন আইন প্রণয়ন করা যায়, তবে বিসিবি নিজস্বভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে।

কেন বারবার বিপিএলে ফিক্সিং?

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শুরুর পর থেকেই ফিক্সিং নিয়ে বিতর্ক থেমে নেই। বিপিএলের জনপ্রিয়তা ও অর্থনৈতিক দিকটি জুয়াড়িদের কাছে বড় আকর্ষণ। প্রতি বছর বিপিএলে কোটি কোটি টাকা ঘোরাফেরা করে, যার সুযোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক ও দেশি বেটিং চক্র।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খেলোয়াড়রা আর্থিক প্রলোভন কিংবা ক্যারিয়ারের অনিশ্চয়তার কারণে এ ধরনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। আবার অনেক সময় প্রমাণের অভাবে শাস্তি দেওয়া যায় না। ফলে জুয়াড়িরা আরও সাহসী হয়ে উঠছে।

সামনে কী হতে পারে?

আগামী সপ্তাহে যখন এই রিপোর্ট বিসিবি সভাপতির হাতে যাবে, তখন বড় ধরনের ঝড় বয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। অভিযুক্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ও খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে বিপিএল আবারও বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে। তবে কঠোর পদক্ষেপই হয়তো একমাত্র পথ, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড চাইছে, এ ঘটনার মাধ্যমে একটি শক্ত বার্তা দেওয়া হোক—ক্রিকেটে দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। কিন্তু বাস্তবে কতটা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।


আরও পড়ুন 

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ: এশিয়া কাপ শেষে নতুন লড়াইয়ের অপেক্ষা

আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ছক্কার সুনামি, রেকর্ড ভাঙার পথে ২০২৫

নিউজিল্যান্ডের ঐতিহাসিক ইনিংস একই টেস্টে তিন ব্যাটারের দেড়শ পেরোনো রেকর্ড।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ