add

সর্বশেষ জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিনোদন খেলাধুলা তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্য ইসলাম শিক্ষা জীবনধারা

সাগরে লঘুচাপের শঙ্কা, সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টি হতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদক |১০ আগস্ট ২০২৫,রবিবার 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ১৩ আগস্টের দিকে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই লঘুচাপের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহজুড়ে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

রোববার (১০ আগস্ট) প্রকাশিত সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ বিভাগে বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে, তবে বুধবার তা স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে মঙ্গলবার রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে কিছুটা শীতল আবহ অনুভূত হতে পারে, যা বর্ষাকালের স্বাভাবিক আবহের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন।

লঘুচাপ সৃষ্টি হলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়বে এবং কোথাও কোথাও অতিভারি বর্ষণও হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অতিভারি বৃষ্টির কারণে নিম্নাঞ্চল ও জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকায় পানি জমে যেতে পারে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কিছু উপকূলীয় এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে আর্দ্র বাতাস প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি করবে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে এ সময় দমকা হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা নৌযান ও মৎস্যশিকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকার নৌযান, ট্রলার ও মাছ ধরার বোটগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত জেলেদের আগামী কয়েক দিন গভীর সমুদ্রের পরিবর্তে উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় মাছ ধরতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতিভারি বর্ষণের ফলে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে যেসব নদী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, সেগুলোতে পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি থাকতে পারে।

পরিবহন খাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টি হলে সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে, বিশেষ করে গ্রামীণ কাঁচা সড়কগুলো কাদাযুক্ত হয়ে যান চলাচলে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েডসহ জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এই সময়ে খাবার ও পানির প্রতি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এছাড়া বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় না থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কৃষি খাতের জন্য এই বৃষ্টি একদিকে উপকারী হলেও অন্যদিকে ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে। ধান, পাট ও সবজি চাষের জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টি প্রয়োজন হলেও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি করে ফসলের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের সবজি চাষীরা এসময় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই কৃষকদেরকে জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লঘুচাপের সঠিক প্রভাব বোঝা যাবে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। স্যাটেলাইট ও রাডারের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে মেঘের ঘনত্ব বেড়ে গেছে, যা লঘুচাপের পূর্বাভাসকে আরও জোরদার করছে।

সামগ্রিকভাবে, আগামী সপ্তাহজুড়ে দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় সাধারণ মানুষকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার এবং বের হলে ছাতা বা রেইনকোট সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষদেরকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।


আরও পড়ুন 

দেশজুড়ে বৃষ্টির ইঙ্গিত, সুস্পষ্ট লঘুচাপ পরিণত হয়েছে নিম্নচাপে

তারেক রহমানকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন মির্জা ফখরুল।

নারী ফুটবলে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ