add

সর্বশেষ জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিনোদন খেলাধুলা তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্য ইসলাম শিক্ষা জীবনধারা

সিলেটে যৌথ বাহিনীর অভিযান: বিপুল সাদাপাথর উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদন |১৮ আগস্ট ২০২৫,সোমবার 

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় গত ছয় দিন ধরে চলা যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্সের বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ সাদাপাথর উদ্ধার করা হয়েছে। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং আরও চার লাখ ঘনফুট পাথর বিভিন্ন স্থানে জব্দ অবস্থায় রাখা হয়েছে।

টানা অভিযানে প্রশাসনের সাফল্য

অভিযান শুরুর পর থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন হলেও এবার প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে সেই প্রবণতায় ভাটা পড়ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, অভিযানে শুধুমাত্র গত সোমবারই সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও জাফলং এলাকা থেকে ৩১ হাজার ৭০০ ঘনফুট সাদাপাথর উদ্ধার করা হয়।

এর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের কলাবাড়ি এলাকায় বালুর স্তূপের নিচে লুকিয়ে রাখা প্রায় ২৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়। একইভাবে শিমুলতলায় টিনের বেড়ার আড়াল থেকে বিপুল পাথর জব্দ করা হয়েছে। এসব জায়গা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সিন্ডিকেট অবৈধভাবে ব্যবহার করছিল বলে জানা গেছে।

নেতৃত্বে নির্বাহী কর্মকর্তারা

এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় দিন-রাত যৌথ বাহিনী মাঠে কাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধারকৃত পাথরগুলো আপাতত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জিম্মায় রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে ভোলাগঞ্জে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিস্থাপন করা হবে।

এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে স্থানীয়ভাবে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ অবৈধ পাথর সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে এবং ভবিষ্যতে তা সঠিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমদানি করা পাথরের সঙ্গে অবৈধ মিশ্রণ

অভিযান চলাকালে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বেশ কিছু অনিয়মেরও সন্ধান পেয়েছেন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় দেখা গেছে, বৈধভাবে আমদানি করা পাথরের ট্রাকের সঙ্গে কৌশলে অবৈধ সাদাপাথর মিশিয়ে বাইরে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে এসব ট্রাক আটক না করলেও সেগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, নিয়মিত নজরদারি জোরদার করা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের কৌশল ব্যর্থ হবে এবং চোরাকারবারিরা আর এভাবে লাভবান হতে পারবে না।

পরিবেশ রক্ষায় কোয়ারি বন্ধের সিদ্ধান্ত

উল্লেখ্য, সিলেটে পাথর উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে নদীর তলদেশ, পাহাড়ি ঢাল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণে ২০২০ সালের পর থেকে সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি আর ইজারা দেওয়া হয়নি।

তবে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর প্রায় এক বছর ধরে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন চলেছে। এ সময় স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনের দুর্বলতা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় একের পর এক কোয়ারি থেকে সাদাপাথর তুলে নিয়ে যায়। এর ফলে সরকারের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি মারাত্মক পরিবেশগত ক্ষতি হয়েছে।

প্রশাসনের কঠোর অবস্থান

বর্তমান প্রশাসন বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর ফেরত আনা এবং চক্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এখন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, "অভিযান শুধু একবারের জন্য নয়, চলমান থাকবে। যতদিন না পুরোপুরি অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে, ততদিন এই উদ্যোগ চালু থাকবে।"

স্থানীয়দের মতে, এবারের অভিযানের ফলে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে যারা এই অবৈধ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন, তারা এখন ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

কোম্পানীগঞ্জ ও জাফলং অঞ্চলের স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন হলেও তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

অভিযানের ফলে এখন এলাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, সরকার যদি এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখে, তবে সিলেটের পরিবেশ রক্ষা এবং সুষ্ঠু পাথর ব্যবসার পথ সুগম হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

অভিযানের ফলাফল দেখে প্রশাসন আরও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা ভাবছে। শুধু উদ্ধার নয়, অবৈধ ব্যবসার মূল চক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্টে তদারকি বাড়ানো হচ্ছে, যাতে আমদানিকৃত পাথরের সঙ্গে আর কোনো অবৈধ পাথর মিশিয়ে নেওয়া না যায়।

এছাড়া, উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমাণ পাথর সরকারি তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা গেলে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেষ কথা

সিলেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে চলমান এই অভিযান শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়, সরকারের রাজস্ব বাড়ানো ও আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। প্রশাসনের এমন কঠোর পদক্ষেপে সাধারণ মানুষ আশাবাদী হয়েছে যে, অবৈধ ব্যবসার লাগাম এবার সত্যিই টেনে ধরা সম্ভব। 


আরও পড়ুন 

সাগরে ইলিশের সন্ধানে মৎস্যজীবীরা

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি টানা দুই বছর নিম্নমুখী, নতুন বাজারে সম্ভাবনা।

যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কছাড়ে আশার আলো: গার্মেন্টস রপ্তানিতে নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ