বিজেপিকে ফ্যাসিস্ট বলায় থালাপতি বিজয়ের নামে মামলা

দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা ও নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্বের মুখ থালাপতি বিজয় আবারও আলোচনায় এসেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপিকে প্রকাশ্যে “ফ্যাসিস্ট” আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেওয়ার পর এবার তার নাম জড়িয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর পেরাম্বালুর জেলার কুন্নাম থানায় দায়ের হওয়া এই মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, বিজয়ের একটি রাজনৈতিক সমাবেশে তার দেহরক্ষীরা এক ভক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। শরৎকুমার নামের ওই ব্যক্তি এ অভিযোগ এনে মামলা করেন এবং পুলিশ জানায়, ভারতীয় দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত থালাপতি বিজয় বা তার দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিজয়ের এই পরিস্থিতি নিছক আইনি ঝামেলায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। বিশেষ করে বিজেপিকে সরাসরি “ফ্যাসিস্ট” আখ্যা দেওয়া মন্তব্যই তার জন্য বড় ধরনের বিতর্ক ডেকে এনেছে।

থালাপতি বিজয় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র জগতে শীর্ষ তারকা হিসেবে জনপ্রিয়। ২০২৪ সালে তিনি রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু করেন এবং ঘোষণা দেন ‘তামিলাগা ভেট্রি কাজাগম (টিভিকে)’ নামের রাজনৈতিক দলের। এরপর থেকে রাজনীতিতে তার পদক্ষেপ একের পর এক চমক তৈরি করছে। চলতি মাসের শুরুতে দলের এক সম্মেলনে তিনি জানিয়ে দেন যে, আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি মাদুরাই পূর্ব আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সেখানেই তিনি বিজেপিকে আদর্শগত শত্রু এবং ডিএমকেকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উল্লেখ করেন। বিজয়ের সেই বক্তব্য দ্রুতই ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, থালাপতি বিজয়ের উত্থান তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। তার জনপ্রিয়তা বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রবলভাবে প্রভাব ফেলছে। অনেকে বলছেন, পরিস্থিতি অনেকটা ১৯৬৭ ও ১৯৭৭ সালের মতো হয়ে উঠছে, যখন আন্নাদুরাই এবং এম.জি. রামাচন্দ্রনের মতো নেতারা তামিল রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন। ফলে বিজয়ের পদক্ষেপ তামিল রাজনীতির জন্য এক নতুন অধ্যায় সূচিত করতে পারে।

মামলার ঘটনায় তার ভাবমূর্তি এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনায় প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে। সমর্থকরা মনে করছেন, এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ, যাতে বিজয়ের রাজনৈতিক যাত্রা ব্যাহত হয়। অন্যদিকে বিরোধী শিবির বলছে, জনপ্রিয়তার মোড়কে তিনি দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন, যার ফল রাজনীতিতেই নয়, সমাজেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বর্তমানে বিজয় এবং তার দল টিভিকে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়ভাবে সংগঠন গড়ে তুলছে। সমাবেশে হাজার হাজার সমর্থকের ভিড় প্রমাণ করে, তার প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু মামলার এই চাপ এবং আইনি লড়াই তার ভবিষ্যৎ পথচলায় কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত স্পষ্ট একটি বিষয় হলো—বিজেপিকে প্রকাশ্যে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দেওয়া এবং তার বিরুদ্ধে মামলা—দুটিই মিলে তামিলনাড়ুর রাজনীতিকে নতুন করে আলোচনায় এনে দিয়েছে।



আরও পড়ুন

১.১৫ বছর বিএনপির জন্য লড়েছি, অথচ আজ তারাই আমাকে ধাক্কা দিল: রুমিন ফারহানা

২.হোয়াইট হাউসে বৈঠকের মাঝেই ট্রাম্প–পুতিন ফোনালাপ

৩.আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে দিল্লির প্রতিক্রিয়া

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ