নিজস্ব প্রতিবেদন |২৪ আগস্ট ২০২৫,রবিবার
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা দীর্ঘদিন ধরে দলের সক্রিয় নেত্রী হিসেবে পরিচিত। আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয়তা—সব ক্ষেত্রেই তিনি বিএনপির হয়ে লড়ে গেছেন। কিন্তু রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে গিয়ে তিনি এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের নতুন সীমানা নিয়ে আয়োজিত শুনানিতে দলের ভেতরের লোকের হাতেই তিনি ধাক্কার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন।
রুমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, “১৫ বছর ধরে বিএনপির জন্য লড়াই করলাম, অথচ আজ নিজের দলের ভেতর থেকেই আমাকে ধাক্কা খেতে হলো। আমি কখনো ভাবিনি এমন ঘটনা ঘটতে পারে।” তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে, এ ঘটনার কারণে তিনি মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ।
ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি জানি না ধাক্কা দেওয়া ব্যক্তি জামায়াতের লোক, নাকি এনসিপির সঙ্গে যুক্ত। তবে নিশ্চিতভাবে বলছি, প্রথম আঘাতটা তাদের পক্ষ থেকেই এসেছে। আমার সমর্থকরা তো বসে থাকবে না, তারা স্বাভাবিকভাবে আমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে। এরপর তাদের ওপরও হামলা হয়, ফলে তারা আত্মরক্ষায় জবাব দিয়েছে।”
বিএনপির এই নেত্রী আরও জানান, নির্বাচনী এলাকা পুনঃসীমানা নির্ধারণের বিষয়টি নতুন নয়। বিএনপি আগেও বহুবার ২০০৮ সালের পূর্ববর্তী সীমানায় ফেরার দাবি জানিয়ে এসেছে। রুমিনের মতে, সেই পুরোনো সীমানাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ছিল এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়াও এটিকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে যেভাবে বিভাজন করা হয়, তা মূলত ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য করা হয়েছিল। তিনি একে “ফ্যাসিবাদী সরকারের কৌশল” বলে উল্লেখ করেন।
শুনানির ভেতরে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেটিকে তিনি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন। তার ভাষায়, “আমি একজন আইনজীবী হিসেবে চেয়েছিলাম নিজের কেস নিজেই উপস্থাপন করব। কমিশনের প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল, তারা কমপক্ষে শুনানির পরিবেশ নিরাপদ রাখবে। কিন্তু আমি নিজ চোখে দেখেছি, প্রায় ২০-২৫ জন গুণ্ডামূলক আচরণ করছে, যাদের সেখানে কোনো অধিকারই ছিল না।”
রুমিন আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন এখনও শুরু হয়নি, অথচ সীমানা সংশোধনের মতো একটি প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করেই স্থানীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তার মতে, এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার একটি চিহ্ন। তিনি বলেন, “মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে, মতামত দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অথচ এ জায়গাটা হওয়া উচিত ছিল সবার অংশগ্রহণের।”
এই ঘটনার কারণে রুমিন ফারহানা মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমি রাজনীতিতে আসার পর থেকে নানান ধরনের বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করেছি। সরকারি দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা প্রশাসনিক চাপ—সবকিছুর বিরুদ্ধে লড়েছি। কিন্তু আজ যেটা ঘটল, তা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ এটা আমারই দলের ভেতর থেকে এসেছে।”
তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, “আমি বিএনপির পতাকা হাতে ১৫ বছর ধরে মাঠে থেকেছি। কখনো ভয়ে পিছু হটিনি, বরং সবসময় দলের পক্ষে কণ্ঠ তুলেছি। অথচ আজ এমন অবস্থায় পড়লাম, যখন দলের ভেতরের কিছু মানুষই আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে।”
বিএনপির রাজনীতির প্রতি নিজের অঙ্গীকার আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে রুমিন জানান, তিনি সবসময় ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। তার বক্তব্যে ছিল হতাশার পাশাপাশি দৃঢ়তারও ছাপ। তিনি বলেন, “আমি জানি এই লড়াই সহজ নয়। তবে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আমার অবস্থান থেকে যা যা করার দরকার, তাই করব।”
ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি এটিকে “লজ্জাজনক ও দুঃখজনক” আখ্যা দেন। তার মতে, এ ধরনের আচরণ শুধু একজন ব্যক্তিকে অপমান করে না, বরং পুরো দলের জন্যই নেতিবাচক বার্তা বয়ে আনে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং ভবিষ্যতে যেন এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা আর না ঘটে, সেদিকে নজর দেবেন।
দিনশেষে রুমিন ফারহানার কণ্ঠে হতাশা স্পষ্ট ছিল। তিনি বলেন, “আজ যা ঘটেছে, তা আমার ১৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনো হয়নি। বিএনপির জন্য এতদিন লড়েছি, অথচ আজ নিজ দলের ভেতরের কিছু লোকের আচরণ আমাকে গভীরভাবে কষ্ট দিয়েছে।
আরও পড়ুন
১.ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন: সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন পরিবেশ উপদেষ্টা
২.তারেক রহমানকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন মির্জা ফখরুল।
৩.খাদ্য মজুদ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে: দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ইতিবাচক সাফল্য
0 মন্তব্যসমূহ