নিজস্ব প্রতিবেদক|১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫|
দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্বে সবার আগেই কাতার বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। তাই শেষ ম্যাচটিকে ঘিরে খুব একটা চাপ ছিল না লিওনেল স্কালোনির শিষ্যদের ওপর। তবে লিওনেল মেসিকে ছাড়া দলটা মাঠে নামায় সমর্থকদের কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। পাঁচ দিন আগেই ঘরের মাঠে ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছিল তারা। কিন্তু ইকুয়েডরের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে আর্জেন্টিনা। কুইটো শহরের ঐতিহাসিক এস্তাদিও মনুমেন্তালে ১-০ গোলে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে আলবিসেলেস্তেদের।
লাল কার্ডে ভাঙল ছন্দ
খেলার শুরুটা ছিল আর্জেন্টিনার নিয়ন্ত্রণে। মাঝমাঠে ধারাবাহিক পাস বিনিময় আর আক্রমণাত্মক মুভমেন্টে চাপ বাড়াতে থাকে তারা। কিন্তু ৩১ মিনিটেই ঘটে যায় ম্যাচের মোড় ঘোরানো ঘটনা। ইকুয়েডরের অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড ও অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া প্রায় এককভাবে গোলের দিকে ছুটছিলেন। তখনই তাকে ফাউল করে বসেন নিকোলাস ওতামেন্দি। রেফারি কোনো দেরি না করেই লাল কার্ড দেখান আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারকে। এক ঝটকায় ১০ জনের দলে পরিণত হয় বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার সম্ভাবনা তৈরি হলেও যোগ করা সময়েই ভাগ্যের শিকার হয় আর্জেন্টিনা। বক্সে লাফিয়ে উঠতে গিয়ে নিকোলাস তালিয়াফিকোর কনুই লাগে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার অ্যাঞ্জেলো প্রিসিয়াদোর মুখে। ভিএআরের সহায়তায় রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভ্যালেন্সিয়া জালের ঠিকানা খুঁজে পান। আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ডান দিকে ঝাঁপালেও বল ছিল সোজা মাঝ বরাবর। এতে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টাপাল্টি লাল কার্ড
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই আর্জেন্টিনা আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমতায় ফেরার জন্য। কিন্তু ভাগ্য সেদিন তাদের সঙ্গ দেয়নি। ৫০ মিনিটে ইকুয়েডরের তারকা মিডফিল্ডার ময়েসেস কায়কাদো নিকোলাস গঞ্জালেসকে ফাউল করলে দ্বিতীয় হলুদ দেখে মাঠ ছাড়েন। দুই দলই তখন সমান সংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে খেলতে থাকে।
তারপরও গোলের দেখা মেলেনি আর্জেন্টিনার। পুরো ম্যাচে ৫৮ শতাংশ বল দখলে রেখে মোট ৮ বার শট নিয়েছিল তারা। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে একটিও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। বিপরীতে ইকুয়েডর নেয় ১১টি শট, যার মধ্যে ৪টি ছিল অন টার্গেট। ফলে রক্ষণভাগের দৃঢ়তা আর ভাগ্যের জোরে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
পরিসংখ্যান ও ইতিহাস
এই জয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ এক দশকের খরা কাটাল ইকুয়েডর। ২০১৫ সালের পর এটাই প্রথমবার আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে জয় পেল তারা। অন্যদিকে হারের পরও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে আলবিসেলেস্তেরা।
মোট ১৮ ম্যাচে ১২ জয়, ২ ড্র এবং ৪ হারে তাদের সংগ্রহ ৩৮ পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইকুয়েডরের সংগ্রহ ২৯ পয়েন্ট। এই দুই দলই ইতোমধ্যে বিশ্বকাপের মূলপর্ব নিশ্চিত করে ফেলেছে, তাই শেষ ম্যাচের ফলাফলে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে মর্যাদার লড়াইয়ে হেরে কিছুটা হতাশ হয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্কালোনির শিষ্যদের।
মেসির অনুপস্থিতি কি প্রভাব ফেলল?
পাঁচ দিন আগেই ঘরের মাঠে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে সম্ভাব্য শেষ আন্তর্জাতিক হোম ম্যাচ খেলেছিলেন লিওনেল মেসি। তাকে ছাড়া দল কতটা ছন্দ হারায়—সেটাই যেন প্রমাণ হলো ইকুয়েডরের বিপক্ষে। মাঝমাঠে সৃজনশীলতার ঘাটতি ও ফিনিশিংয়ের দুর্বলতা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।
তবে ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন শিবির খুব একটা ভেঙে পড়েনি। কারণ লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করা, যা তারা অনেক আগেই সেরে ফেলেছে। এখন মূল টার্গেট কাতারে শিরোপা ধরে রাখা।
আর্জেন্টিনার এই হার বড় কোনো ধাক্কা নয়, তবে ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা বটে। মূল তারকা অনুপস্থিত থাকলে কীভাবে দলকে সামলাতে হবে—সেই শিক্ষা পেয়ে গেল স্কালোনির দল। অন্যদিকে ইকুয়েডরের জন্য এই জয় বাড়তি আত্মবিশ্বাসের, যা তাদের বিশ্বকাপ যাত্রায় বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাবে।
আরও পড়ুন
১.পেনাল্টি গোলে রিয়ালের ঐতিহাসিক জয়
২.নারী ফুটবলে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
৩.CHAN 2024 Football: কেনিয়া, তানজানিয়া ও উগান্ডায় ৩০ দিনের ফুটবলযুদ্ধ
0 মন্তব্যসমূহ