এশিয়া কাপে আলো ছড়াতে পারেন তরুণ পাঁচ ব্যাটসম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদন |৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ |

আসন্ন এশিয়া কাপকে ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ এখন তুঙ্গে। টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ানোর আগেই আলোচনা শুরু হয়েছে তরুণ প্রতিভাদের নিয়ে। বিশেষ করে ২৫ বছরের কম বয়সী কয়েকজন ব্যাটসম্যান প্রথমবারের মতো মহাদেশীয় এই আসরে নামতে যাচ্ছেন। অভিষেক মৌসুমেই তাঁরা নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারবেন কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে অনেকে ইতিমধ্যে নজর কেড়েছেন।

পারভেজ হোসেন (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশ দলে নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে আলোচিত নাম পারভেজ হোসেন। ২০২২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলেও আসল আলোচনায় আসেন চলতি বছরের মে মাসে, যখন শারজায় আমিরাতের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাঁর আক্রমণাত্মক মনোভাব। এ বছর মাত্র ১২ ইনিংসে ২২টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। স্ট্রাইক রেট ১৫৩.৮০ তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। নিজের প্রথম এশিয়া কাপে এই তরুণ ব্যাটসম্যান দলের বড় ভরসা হয়ে উঠতে পারেন।

অভিষেক শর্মা (ভারত)

ভারতের হয়ে তরুণ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন অভিষেক শর্মা। মাত্র এক বছরের মধ্যেই আইসিসি টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে আসা এই ক্রিকেটার ইতিমধ্যে ভয়ংকর এক নাম হয়ে উঠেছেন প্রতিপক্ষের জন্য। ১৬ ম্যাচে করেছেন ৫৩৫ রান, গড় স্ট্রাইক রেট ১৯৩.৮৫—যা যে কোনো বোলারের জন্য আতঙ্ক। তাঁর ছক্কার সংখ্যা ৪১, আর ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ১৩৫ রানের ইনিংস এখনো ভারতীয় টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সেরা ব্যক্তিগত স্কোর হিসেবে আলোচিত। এশিয়া কাপে ভারতীয় সমর্থকদের আশা থাকবে, অভিষেক ব্যাট হাতে আরেকটি বিশেষ কিছু করে দেখাবেন।

হাসান নেওয়াজ (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের তরুণ প্রতিভা হাসান নেওয়াজের শুরুটা হয়তো খুব ভালো ছিল না। প্রথম দুটি ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। তবে তৃতীয় ম্যাচেই ৪৪ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সবাইকে চমকে দেন। যদিও এখনো ধারাবাহিকতা আসেনি তাঁর ব্যাটিংয়ে, তবু ভয়ংকর ইনিংস খেলার ক্ষমতা রাখেন এই ২৩ বছর বয়সী ব্যাটার। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ছক্কার সংখ্যা ৩৪, যা চার মেরে পাওয়া রানের চেয়ে বেশি। স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৪৪ প্রমাণ করে কেন তাঁকে ভয় পায় প্রতিপক্ষ বোলাররা। এবারের আসরে যদি ছন্দে থাকেন, তাহলে পাকিস্তানের জন্য হয়ে উঠতে পারেন ম্যাচ উইনার।

সেদিকউল্লাহ আতাল (আফগানিস্তান)

আফগানিস্তানের ক্রিকেটে নতুন তারকার নাম সেদিকউল্লাহ আতাল। জাতীয় দলে অভিষেকের আগেই ইমার্জিং এশিয়া কাপে পাঁচ ম্যাচে টানা পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে আলোচনায় আসেন তিনি। সেখানেই রান করেছিলেন ৩৬৮। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান এরপর জাতীয় দলে জায়গা পাকাপোক্ত করে নেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস কিংবা সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় সিরিজে ফিফটি হাঁকানো প্রমাণ করে, বড় ম্যাচে চাপ সামলাতে তিনি দারুণ পারদর্শী। এবারের এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠতে পারেন আতাল।

 কামিল মিশারা (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলঙ্কার কামিল মিশারা কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখলেও শুরুতে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ফলে দল থেকে বাদ পড়তে হয় তাঁকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে ফিরেছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৪৩ বলে অপরাজিত ৭৩ রান করে শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচ জিতিয়েছেন। সেই ইনিংস তাঁকে আত্মবিশ্বাসের বড় জোগান দিয়েছে। তাই এবারের এশিয়া কাপে মিশারা আলো ছড়াবেন, এটাই প্রত্যাশা লঙ্কান সমর্থকদের।

আলোচনায় আরও আছেন—আমিরাতের আলিশান শরাফু

যদিও শিরোপার দাবিদার দলের তালিকায় আমিরাত নেই, তবে স্থানীয় দর্শকদের চোখ থাকবে আলিশান শরাফুর দিকে। মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি দলের মূল ভরসায় পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পাওয়া ম্যাচে অপরাজিত ৬৮ রান এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে সমান রান করেই প্রমাণ করেছেন, বড় দলের বিপক্ষেও ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে খেলতে নেমে তিনি চমক দেখাতে পারেন।

সব মিলিয়ে এবারের এশিয়া কাপ শুধু অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের লড়াই নয়, বরং তরুণ প্রতিভাদের নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার তরুণ ব্যাটাররা একদিকে যেমন নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে চাইবেন, অন্যদিকে ভক্তরাও তাঁদের কাছ থেকে আগ্রহভরে বড় ইনিংস প্রত্যাশা করবেন। পারভেজ, অভিষেক, হাসান, সেদিকউল্লাহ, মিশারা কিংবা আলিশান—যে কেউ এবারের টুর্নামেন্টে হয়ে উঠতে পারেন আসল চমক।



আরও পড়ুন

১.আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে বড় ধাক্কা খেলেন সাকিব আল হাসান

২.বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ: এশিয়া কাপ শেষে নতুন লড়াইয়ের অপেক্ষা

৩.আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ছক্কার সুনামি, রেকর্ড ভাঙার পথে ২০২৫


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ