নিজস্ব প্রতিবেদন |২৩ আগস্ট ২০২৫,শনিবার
ডায়াবেটিস আজকের যুগে একটি বহুল পরিচিত ও জটিল স্বাস্থ্যসমস্যা। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শরীরে ইনসুলিনের অভাব বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক সীমার বাইরে চলে যায়, আর তখনই দেখা দেয় ডায়াবেটিস। একবার এই রোগ ধরা পড়লে তা সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না, তবে নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব। এজন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অপরিহার্য।
ফলমূল ও শুকনো ফলকে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ধরা হয়। এগুলোতে প্রাকৃতিক ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। বিশেষ করে খেজুর ও শুকনো ডুমুর আমাদের দেশে এবং বাইরেও ব্যাপক জনপ্রিয়। উপবাস ভাঙতে খেজুর ছাড়া চলে না, আবার শুকনো ডুমুরকে অনেকে দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রাখেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ফলগুলো কতটা নিরাপদ?
শুকনো ফলের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো থেকে পানি বাদ দেওয়া হয় বলে আকারে ছোট হলেও পুষ্টিগুণ ও চিনি ঘন অবস্থায় থাকে। তাই এক মুঠো শুকনো ফলে যতটা চিনি পাওয়া যায়, একই পরিমাণ তাজা ফলে তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে। ফলে ডায়াবেটিস রোগী যদি অসচেতনভাবে শুকনো ফল খান, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে সীমিত পরিমাণে খেলে এগুলো শরীরের জন্য উপকারীও হতে পারে।
খেজুরের কথা ধরলে দেখা যায়, প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২৮০ থেকে ৩০০ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। এতে প্রাকৃতিক শর্করা যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ থাকে, যা দ্রুত শরীরকে শক্তি জোগায়। পাশাপাশি ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বড় সমস্যা হলো, খেজুরে থাকা উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক চিনি। দিনে কয়েকটি খেজুর খাওয়া শরীরের ক্ষতি না করলেও বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অন্যদিকে শুকনো ডুমুর বা আঞ্জির তুলনামূলকভাবে অনেকটা নিরাপদ। একই পরিমাণে শুকনো ডুমুরে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ কিলোক্যালোরি শক্তি থাকে, যা খেজুরের তুলনায় অনেক কম। শুধু তাই নয়, ডুমুরে ফাইবারের পরিমাণ খেজুরের চেয়ে অনেক বেশি। ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে, দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি রাখে এবং রক্তে শর্করার আকস্মিক উত্থান ঠেকায়। তাই যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য ডুমুর খেজুরের তুলনায় অনেক বেশি উপযোগী।
চিকিৎসকরা বলেন, ডায়াবেটিস রোগীরা একেবারেই শুকনো ফল খেতে পারবেন না—এমনটা নয়। তবে এর পরিমাণ অবশ্যই সীমিত রাখতে হবে। সাধারণত দিনে এক বা দুইটি খেজুর অথবা এক থেকে দুই টুকরো শুকনো ডুমুর খাওয়া নিরাপদ ধরা হয়, তবে তার বেশি হলে ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ওষুধ বা ইনসুলিন নেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যতালিকায় এসব ফল যুক্ত করা উচিত।
আরেকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, শুকনো ফল কেনার সময় ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে এগুলোতে অতিরিক্ত চিনি, সিরাপ বা প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়েছে কি না। বাজারে অনেক সময় শুকনো ফলকে মিষ্টি করতে বাড়তি চিনি মেশানো হয়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে। তাই প্রাকৃতিকভাবে শুকনো ফল কেনাই উত্তম।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, সাদা চিনি, মিষ্টি বা ডেজার্টের বিকল্প হিসেবে অল্প পরিমাণে শুকনো ফল খাওয়া তুলনামূলকভাবে ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে যেভাবে অনেকেই অসচেতনভাবে খেজুরের বড় বড় টুকরো বা এক মুঠো শুকনো ডুমুর খেয়ে ফেলেন, তা একেবারেই করা উচিত নয়। খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাই ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় নিয়ম।
সবশেষে বলা যায়, ডায়াবেটিস রোগীদের সম্পূর্ণভাবে খেজুর বা শুকনো ডুমুর থেকে বিরত থাকার প্রয়োজন নেই। তবে এ দুটি ফল খাওয়ার সময় অবশ্যই পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান বা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে চান, তাদের জন্য শুকনো ডুমুর তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বিকল্প। অন্যদিকে বিশেষ উপলক্ষে বা শক্তি পাওয়ার জন্য সীমিত পরিমাণে খেজুরও খাওয়া যেতে পারে। তবে প্রতিদিনের অভ্যাসে কোন ফল কতটুকু খাবেন, তা নির্ধারণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো পথ।
আরও পড়ুন
১.দুধের সঙ্গে খেজুর খেলে যেসব উপকার হয় – জানলে অবাক হবেন!
২.আজকের সুস্বাদু রেসিপি: ভুনা খিচুড়ি ও গরুর মাংস
৩.হঠাৎ বদলে যাচ্ছে মোবাইলের ডায়াল প্যাড, জানুন কারণ
0 মন্তব্যসমূহ