নিজস্ব প্রতিবেদন |২০ আগস্ট ২০২৫,বুধবার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল ঘিরে নতুন এক ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। তাদের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্যাসকেডিয়া সাবডাকশন জোনে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে তা থেকে সৃষ্টি হতে পারে ভয়াবহ সুনামি, যার ঢেউয়ের উচ্চতা পৌঁছাতে পারে প্রায় ১,০০০ ফুট পর্যন্ত। এত বিশাল ঢেউ উপকূলীয় শহরগুলোতে মুহূর্তেই ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম এবং এতে লাখো মানুষের জীবন ও অবকাঠামো হুমকির মুখে পড়তে পারে।
ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিনা দুরার নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে ৮.০ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১৫ শতাংশ। গবেষকদের মতে, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে শুরু করে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার আইল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত এই এলাকায় যদি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়, তবে তা সরাসরি ভয়াবহ সুনামির জন্ম দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে উপকূলীয় ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলো মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।
ক্যাসকেডিয়া সাবডাকশন জোনে অতীতে এমন বড় ভূমিকম্প ঘটেছিল ১৭০০ সালে। সেই ভূমিকম্প শুধু উত্তর আমেরিকাকেই কাঁপায়নি, বরং জাপানেও বড় ধরনের সুনামি সৃষ্টি করেছিল। তবে তখন উপকূলীয় অঞ্চলে জনবসতি ও উন্নত অবকাঠামো না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে মার্কিন পশ্চিম উপকূলজুড়ে ঘনবসতি, শিল্পকারখানা, বন্দর ও আধুনিক শহরাঞ্চল গড়ে ওঠায় একবার বড় ভূমিকম্প ঘটলে তার ধ্বংসযজ্ঞ হবে বহুগুণ বেশি।
গবেষকরা বিশেষভাবে দক্ষিণ ওয়াশিংটন, উত্তর ওরেগন এবং উত্তর ক্যালিফোর্নিয়াকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তুলনামূলক কম হওয়ায় ভূমিকম্পের পর যদি বিশাল ঢেউ আঘাত হানে, তবে পুরো উপকূলই তলিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ যেভাবে ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতে এসব এলাকার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সমুদ্র থেকে বিশাল জলরাশি তীরের দিকে ধেয়ে আসবে। ফলে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ খুব সীমিত থাকবে। তাই এখনই জরুরি সতর্কবার্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, ভূমিকম্প সহনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং উপকূলীয় জনগণকে নির্গমনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি।
এমন বিপর্যয় ঘটলে শুধু মানবিক ক্ষয়ক্ষতিই নয়, অর্থনীতিতেও ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল, যেখানে রয়েছে বড় বড় বন্দর, প্রযুক্তি শহর ও শিল্পাঞ্চল। যদি বিশাল সুনামি এসব এলাকায় আঘাত হানে, তবে বৈশ্বিক বাণিজ্যও বড় ধাক্কা খাবে। রপ্তানি-আমদানির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে, বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ব্যাহত হবে এবং কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।
গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় জনগণকে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। ভূমিকম্প বা সুনামির প্রাথমিক সতর্কবার্তা পাওয়া মাত্রই মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। এজন্য কমিউনিটি পর্যায়ে নিয়মিত মহড়া চালানো, নিরাপদ জোন চিহ্নিত করা এবং জরুরি ব্যাগে প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত রাখার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
একইসঙ্গে সরকারেরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জরুরি সতর্কবার্তা ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, উদ্ধারকারী দলকে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ, ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ এবং উপকূলীয় এলাকায় শক্তিশালী সুরক্ষা বাঁধ তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ালে এ ধরনের সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশটি আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকতে পারবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল এখন এক অজানা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অতীতে যেমন বড় ভূমিকম্প ও সুনামি এই অঞ্চলকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি ভবিষ্যতেও একই ধরনের কিংবা আরও ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তাই সময় থাকতে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন, অবহেলা করলে সম্ভাব্য মেগা-সুনামি শুধু যুক্তরাষ্ট্রকেই নয়, গোটা বিশ্বকেও মারাত্মক প্রভাবের মুখে ফেলতে পারে।
সূত্র: আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম
আরও পড়ুন
১. গাজায় টানা হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়াল
২.হোয়াইট হাউসে বৈঠকের মাঝেই ট্রাম্প–পুতিন ফোনালাপ
৩.ট্রাম্পের দাবি, ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্কে রাশিয়া হারিয়েছে বড় তেল ক্রেতা
0 মন্তব্যসমূহ