add

সর্বশেষ জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিনোদন খেলাধুলা তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্য ইসলাম শিক্ষা জীবনধারা

ট্রাম্পের দাবি, ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্কে রাশিয়া হারিয়েছে বড় তেল ক্রেতা

নিজস্ব প্রতিবেদন |১৬ আগস্ট ২০২৫,শনিবার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজার ও ভূরাজনীতির আলোচনায় উঠে এসেছেন। সম্প্রতি আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি দাবি করেছেন, ভারতের ওপর ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে রাশিয়া তাদের অন্যতম বড় অপরিশোধিত তেলের বাজার হারিয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, “ভারত এতদিন রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৪০% অপরিশোধিত তেল আমদানি করত। কিন্তু শুল্ক বাড়ানোর কারণে সেই ব্যবসায়িক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্যত রাশিয়া ভারতের মতো বিশাল ক্রেতাকে হারিয়েছে।”


ভারত-রাশিয়া তেল সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভারতের জন্য অপরিশোধিত তেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যখন পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তখন ভারত তুলনামূলক সস্তায় রুশ তেল কিনতে শুরু করে। এতে রাশিয়ার রাজস্ব আয় টিকে ছিল এবং ভারতের জ্বালানি খাতেও কিছুটা স্বস্তি এসেছিল।

তবে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় এই সম্পর্কের বিরোধিতা করেছে। ওয়াশিংটনের দাবি, রাশিয়ার সঙ্গে তেল ব্যবসা অব্যাহত থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানো কঠিন হবে, কারণ তেল রপ্তানি থেকে পাওয়া অর্থই রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে চালাচ্ছে।


শুল্কের চাপ ও ট্রাম্পের মন্তব্য

ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, “ভারতের ওপর ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হয়েছে। এর ফলে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের তেলের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটাই রাশিয়ার জন্য বড় ধাক্কা।”

তিনি আরও যোগ করেন, চীনও রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কিনছে এবং সেই বাণিজ্য এখনও সক্রিয়। তবে প্রয়োজনে চীনের বিরুদ্ধেও আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। ট্রাম্পের ভাষায়, “আমাকে হয়তো সেটা করতে হবে না, কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, দ্বিতীয় দফায় আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসবে। সেটা রাশিয়ার জন্য ভয়াবহ হতে পারে।”


সাংবাদিকদের প্রশ্ন ও ট্রাম্পের জবাব

এক সাংবাদিক জানতে চান, যখন চীনসহ অনেক দেশ রাশিয়ার তেল আমদানি করছে, তখন কেন শুধু ভারতকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। উত্তরে ট্রাম্প জানান, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও কৌশলগত সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাই রাশিয়ার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ তেল ব্যবসাকে বিশেষভাবে নজরে আনা হয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে শুধু ভারত নয়, অন্য দেশগুলোকেও লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বিভিন্ন পণ্যের ওপর ৫০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। ট্রাম্পের মতে, এর মূল কারণ ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে তেল ব্যবসা। যদিও ভারত বরাবরই বলে আসছে, তাদের জ্বালানি আমদানি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং দেশটির জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অপরিহার্য।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক সবসময়ই সহযোগিতা ও দ্বন্দ্বের মিশ্রণ। একদিকে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও কৌশলগত অংশীদারিত্বে দুই দেশ একে অপরের কাছে ঘনিষ্ঠ; অন্যদিকে বাণিজ্য নীতি ও শুল্ক নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।


রাশিয়ার জন্য এর প্রভাব

রাশিয়ার অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি হলো তেল ও গ্যাস রপ্তানি। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের বড় বাজার হারানোর পর রাশিয়া চীন ও ভারতের দিকে ঝুঁকেছিল। ভারত দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থিতিশীল ও বড় ক্রেতা হিসেবে ছিল। যদি সত্যিই শুল্কের কারণে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে আমদানি কমিয়ে থাকে, তবে সেটি রাশিয়ার অর্থনীতিতে বড় আঘাত হানতে পারে।

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, রাশিয়া এখনও চীন, তুরস্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্যে যুক্ত আছে। তাই ভারত আংশিকভাবে কমলেও পুরোপুরি ক্রেতা হারিয়েছে বলা ঠিক হবে না।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্ব জ্বালানি বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতি নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। একদিকে জ্বালানির দাম বাড়তে পারে, অন্যদিকে ভারতও বিকল্প উৎস খুঁজতে বাধ্য হতে পারে। ভারত ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকে আমদানি বাড়িয়েছে।

অন্যদিকে, চীন স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রাখবে। এতে বোঝা যায়, রাশিয়ার বাজার পুরোপুরি হারায়নি, তবে ভারতের অংশ কমে গেলে তা দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার কারণ হতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক নয়, বরং রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ তিনি আবারও আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন। ভারত, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই ত্রিমুখী সম্পর্ক বিশ্ব রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে শুল্ক, নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতায় বিশ্ব জ্বালানি বাজার আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। ভারত তার স্বার্থে কোন পথে যাবে, রাশিয়া কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে—সেটিই এখন দেখার বিষয়।


আরও পড়ুন 

ট্রাম্পের হুমকি আমলে নিচ্ছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট।

বিবাহবিচ্ছেদের দিনেই ট্রাম্প ডেটের প্রস্তাব দিয়েছিলেন: এমা টমসন।

জুলাই ঘোষণাপত্রে পক্ষপাত ও ইতিহাস বিকৃতি: বার্গম্যানের সমালোচনা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ