নিজস্ব প্রতিবেদন |২৫ আগস্ট ২০২৫,সোমবার
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান মানেই রেকর্ডের অন্য নাম। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ধারাবাহিকতা বিশ্বজুড়ে তাকে আলাদা মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। রবিবার সেই মর্যাদার তালিকায় যুক্ত হলো আরেকটি অনন্য কীর্তি। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) আসরে অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা ফ্যালকনসের হয়ে মাঠে নেমে তিনি ছুঁয়েছেন এমন এক অর্জন, যা তাকে বিশ্ব ক্রিকেটে একেবারেই আলাদা উচ্চতায় তুলে ধরেছে।
সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস পেট্রিয়টসের বিপক্ষে ম্যাচে বল হাতে শুরুটা করেন দুর্দান্তভাবে। নিজের প্রথম ওভারেই ফেরান পাকিস্তানের তারকা ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। এই উইকেটেই সম্পূর্ণ হয় সাকিবের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক। বিশ্ব ক্রিকেটে এই কীর্তির মালিক আছেন মাত্র কয়েকজন—আফগানিস্তানের রশিদ খান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভো, সুনীল নারিন, দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহির এবং এবার যুক্ত হলেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। তবে তার অর্জন এখানেই থেমে থাকেনি; তিনি এমন এক নজির গড়লেন যা বাকিদের কেউই পারেননি।
কারণ ব্যাটিং ও বোলিং—দুই বিভাগ মিলিয়ে সাকিব এখন দাঁড়ালেন এক অনন্য জায়গায়। ৭ হাজারের বেশি রান এবং ৫০০ উইকেটের ডাবল কেবল তারই দখলে। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম এই ফরম্যাটে এমন রেকর্ড ইতিহাসে আর কারো নেই। এখন পর্যন্ত ৪৫৬ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৫৮৫ রান। ব্যাট হাতে যেমন তিনি ভরসা, তেমনি বল হাতেও দলের জন্য নির্ভরযোগ্য অস্ত্র। এমন সমন্বিত পারফরম্যান্সই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখে।
রেকর্ড গড়ার দিনে শুধু ৫০০ উইকেটে থেমে থাকেননি সাকিব। পুরো ম্যাচ জুড়েই ছিলেন কার্যকরী। তিনি বোলিং করেছেন মাত্র দুই ওভার, কিন্তু তার মধ্যেই শিকার করেছেন তিনটি উইকেট। প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার পাশাপাশি রান দিয়েছেন মাত্র ১১। এতে করে ম্যাচের শুরুতেই পেট্রিয়টসের ব্যাটিং লাইনআপ বিপর্যয়ে পড়ে। তবে এখানেই শেষ নয়, ব্যাটিংয়েও দলকে ভরসা দিয়েছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেমে খেলেছেন ১৭ বলে ২৫ রানের কার্যকরী ইনিংস, যেখানে ছিল দুটি ছক্কা আর একটি চার। তার এই ছোট অথচ প্রভাবশালী ইনিংস দলকে সহজ জয়ের পথে এগিয়ে দেয়।
শেষ পর্যন্ত অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা ফ্যালকনস ম্যাচটি জিতে নেয় ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। দলের জয়ে সামনে থেকে অবদান রাখার পুরস্কার হিসেবে ম্যাচসেরার স্বীকৃতি ওঠে সাকিবের হাতে। এটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৪৪তম ম্যাচসেরা পুরস্কার, যা প্রমাণ করে তিনি কতটা ধারাবাহিক এবং কতটা গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়।
ম্যাচ শেষে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাস দেখা যায় সাকিবের মুখে। ইতিহাস গড়া এই মুহূর্তকে ঘিরে তিনি বলেন, “এমন একটি মাইলফলক ছুঁতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সবসময় চেষ্টা করেছি দলের জন্য যতটা সম্ভব অবদান রাখতে। আজ সেটা সম্ভব হওয়ায় ভালো লাগছে।” তার এই কথাতেই প্রতিফলিত হয়েছে একজন সত্যিকারের টিম প্লেয়ারের মানসিকতা।
সাকিবের ক্যারিয়ার জুড়ে এমন অনেক সাফল্যের গল্প রয়েছে, কিন্তু ৫০০ উইকেট ও ৭ হাজারের বেশি রান একসঙ্গে থাকা নিঃসন্দেহে এক অনন্য অধ্যায়। বিশ্ব ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট যেভাবে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে, সেখানে একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে এত ধারাবাহিকতা পাওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে বলা হয় ব্যাটসম্যানদের খেলা, সেখানে বোলার হিসেবে সাকিবের এই সাফল্য তার পরিশ্রম, মেধা ও ধৈর্যেরই প্রতিফলন। একইসঙ্গে ব্যাট হাতে নির্ভরযোগ্যতা যোগ করায় তাকে বলা হয় আসল অর্থেই ‘অলরাউন্ডার’।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে গর্বের মুহূর্ত। আন্তর্জাতিক মঞ্চে যখনই সাকিব মাঠে নামেন, পুরো জাতি চোখ রাখে তার দিকে। তার প্রতিটি সাফল্য যেন হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সাফল্য। বিশ্ব ক্রিকেটে এই নতুন রেকর্ড তাকে শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটকেও তুলে ধরেছে নতুন উচ্চতায়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, রবিবারের ম্যাচটি ছিল সাকিবের ক্যারিয়ারের আরেক স্মরণীয় দিন। একদিকে ৫০০ উইকেটের ক্লাবে নাম লেখানো, অন্যদিকে ব্যাট-বলে প্রভাব বিস্তার করে দলকে জেতানো—এ যেন তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি। মাঠে নামলেই তিনি প্রমাণ করে দেন, কেন তাকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বলা হয়।
আরও পড়ুন
১.বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং প্রস্তাব: ৪০০ কোটি টাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য
২.বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ: এশিয়া কাপ শেষে নতুন লড়াইয়ের অপেক্ষা
৩.আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ছক্কার সুনামি, রেকর্ড ভাঙার পথে ২০২৫
0 মন্তব্যসমূহ