নিজস্ব প্রতিবেদক|৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫|
স্বাস্থ্য রক্ষায় দেশি–বিদেশি নানা প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির পাশাপাশি অনেকেই এখনো ভেষজ উপাদানকে প্রাথমিক চিকিৎসার অংশ হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। সেই তালিকায় অন্যতম হলো পেয়ারা পাতা। সাম্প্রতিক গবেষণা ও অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, পেয়ারা পাতার রস বিভিন্ন ধরনের ব্যথা উপশমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভাণ্ডার
পেয়ারা ফল ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অন্যতম উৎস। তবে এর পাতা থেকেও শরীরের জন্য উপকারী উপাদান পাওয়া যায়। গবেষকেরা বলছেন, পেয়ারা পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্ষতিকারক জারণ প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়, যা প্রদাহজনিত ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
পেটব্যথা ও হজমজনিত সমস্যা
অনেক সময় ডায়রিয়া বা পেটব্যথায় ভুগলে মানুষ ওরাল সল্যুশন খাওয়ার পাশাপাশি পেয়ারা পাতার রস পান করেন। ধারণা করা হয়, এই রস অন্ত্রের প্রদাহ কমিয়ে ব্যথার ঘনত্ব হ্রাস করতে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সরাসরি ওষুধের বিকল্প না হলেও প্রাকৃতিক সাপোর্টিভ থেরাপি হিসেবে কাজ করতে পারে।
হাঁটুর ব্যথায় উপকার
একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা নিয়মিত সীমিত পরিমাণে পেয়ারা পাতার রস পান করেছেন, তারা হাঁটুর ব্যথা থেকে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। বিশেষ করে যাদের হাঁটু শক্ত হয়ে যায় বা আর্থ্রাইটিসের প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে, তাদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে।
মাসিকের সময় ব্যথা কমাতে সহায়ক
মেয়েদের মাসিক চলাকালে অনেকের তলপেটে তীব্র খিঁচুনি হয়, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ডিসমেনোরিয়া নামে পরিচিত। প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারা পাতার রস পান করলে এই ধরনের ব্যথা কিছুটা উপশম হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে আরও বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রয়োজন।
দাঁতের মাড়ির রোগে উপকার
পেয়ারা পাতার নির্যাস দিয়ে কুলি বা মুখ ধোয়ারও প্রচলন রয়েছে। ধারণা করা হয়, এটি জিঞ্জিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে মাড়ি ফুলে যাওয়া কিংবা রক্ত পড়ার মতো সমস্যাও কিছুটা কমতে পারে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
চিকিৎসকেরা অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন, শুধুমাত্র পেয়ারা পাতার রসের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। এটি কোনো ওষুধের বিকল্প নয়, বরং সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘস্থায়ী অসুখে ভুগছেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই ধরনের ভেষজ উপাদান গ্রহণ করা উচিত।
প্রকৃতির ভাণ্ডারে এমন অনেক উপাদান রয়েছে, যা মানুষের শরীরের জন্য উপকারী। পেয়ারা পাতার রস তার একটি চমৎকার উদাহরণ। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি পেটব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, মাসিকজনিত খিঁচুনি কিংবা মাড়ির সমস্যায় সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ভেষজ পদ্ধতিকে প্রধান চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার না করার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন
১.দুধের সঙ্গে খেজুর খেলে যেসব উপকার হয় – জানলে অবাক হবেন!

0 মন্তব্যসমূহ