নিজস্ব প্রতিবেদন |১৮ আগস্ট ২০২৫,সোমবার
মানুষের জীবনে ভালোবাসা, সংসার, সন্তান, আর্থিক নিরাপত্তা—সবকিছুই থাকতে পারে। তবুও অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ পরকীয়ার মতো জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি শুধুমাত্র শারীরিক আকর্ষণ বা ক্ষণিকের আবেগ নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমনকি আর্থিক নানা কারণ। বিশ্বজুড়ে করা গবেষণাগুলো বলছে, পরকীয়া একক কোনো কারণে ঘটে না, বরং একাধিক জটিল উপাদান মিলেই মানুষকে এমন সম্পর্কে জড়াতে প্রলুব্ধ করে।
গবেষণায় যা উঠে এসেছে
কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পরকীয়ার পেছনে সবসময় সঙ্গীর প্রতি অসন্তুষ্টি দায়ী নয়। অনেকে কেবল নতুন অভিজ্ঞতার আকর্ষণেই এমন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। আবার ইনফিডেলিটি রিকভারি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষণে দেখা যায়, যারা জীবনে আবেগগত শূন্যতা অনুভব করেন বা সঙ্গীর কাছ থেকে যথেষ্ট গুরুত্ব পান না, তারা অনেক সময় বাইরের সম্পর্কের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক ড. জাস্টিন লেমিলার উল্লেখ করেন— সুখী সংসার থাকা সত্ত্বেও অনেক মানুষ বৈচিত্র্য, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনার খোঁজে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর মতে, মানুষের জীবনে একঘেয়েমি অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়। কানাডার সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অ্যামি রোকাচ বলেন, একাকিত্ব বা ভালোবাসার অভাবও অনেকের কাছে পরকীয়াকে “সমাধান” হিসেবে মনে হতে পারে, যদিও এতে সমস্যার সমাধান হয় না, বরং নতুন জটিলতা তৈরি হয়।
পরকীয়ার প্রধান কারণগুলো
গবেষণা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি সাধারণ কারণ চিহ্নিত করেছেন—
- দাম্পত্য জীবনে অসন্তুষ্টি বা অবহেলা – যখন সঙ্গীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় যত্ন, ভালোবাসা বা মনোযোগ পাওয়া যায় না, তখন অনেকেই অন্য সম্পর্কে সুখ খোঁজেন।
- নতুনত্ব ও রোমাঞ্চের খোঁজ – দীর্ঘ সময় একই সম্পর্কে থাকতে গিয়ে একঘেয়েমি চলে আসে। তখন অনেকেই বৈচিত্র্যের খোঁজে পরকীয়া করেন।
- মানসিক স্বস্তি খোঁজা – কারও কারও জন্য পরকীয়া হলো চাপ, হতাশা বা দুঃখ কাটানোর একটি উপায়।
- ডেটিং অ্যাপ ও অনলাইন সম্পর্ক – প্রযুক্তি মানুষকে একে অপরের কাছাকাছি এনেছে। এখন চাইলে সহজেই গোপনে নতুন সম্পর্কে জড়ানো সম্ভব, যা পরকীয়াকে আরও সহজ করেছে।
- সহকর্মীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানো – অফিসে একসঙ্গে কাজ করার কারণে অনেক সময় সহকর্মীর সঙ্গে আবেগীয় ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।
- বারবার প্রেমে পড়ার স্বভাব – কিছু মানুষ সহজেই অন্য কারও প্রতি আকৃষ্ট হন। তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি এক সম্পর্ক ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
- মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা – যেমন বাইপোলার ডিজঅর্ডার, ডিপ্রেশন বা পিটিএসডি অনেক সময় সম্পর্ককে অস্থির করে তোলে। এর প্রভাবও পরকীয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
- সামাজিক মর্যাদা বা আর্থিক স্বার্থ – কেউ কেউ ক্ষমতা বা অর্থের লোভে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
- অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া – পরিপক্ব হওয়ার আগেই বিয়ে হলে অনেকের মনে “আরও কিছু পাওয়ার” আকাঙ্ক্ষা থেকে যায়।
- শৈশবের ট্রমা বা পরিবারে অশান্তি – যাদের শৈশবে পরিবারে ভালোবাসা, নিরাপত্তা বা স্থিতিশীলতা ছিল না, তাদের অনেক সময় প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।
- প্রতিশোধপরায়ণতা – কেউ যদি মনে করেন তার সঙ্গী তাকে কষ্ট দিয়েছেন বা প্রতারণা করেছেন, তখন প্রতিশোধের মানসিকতায় নিজেরাও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়তে পারেন।
- অভ্যাসগত প্রতারণা – কারও কারও জন্য পরকীয়া শুধু এক ধরনের অভ্যাস বা রোমাঞ্চের খেলা। তারা সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝেন না।
পরকীয়ার প্রভাব
যে কারণেই হোক, পরকীয়া প্রায় সবক্ষেত্রেই সম্পর্কের জন্য ধ্বংসাত্মক। এতে বিশ্বাস নষ্ট হয়, মানসিক আঘাত সৃষ্টি হয় এবং অনেক সময় সংসার ভাঙনের মতো বড় সমস্যা দেখা দেয়। শুধু সম্পর্ক নয়, সন্তানদের ভবিষ্যত, আত্মীয়তার বন্ধন এমনকি সামাজিক অবস্থানও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কীভাবে এড়িয়ে চলা যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে সবচেয়ে জরুরি হলো খোলামেলা যোগাযোগ। সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি নিজের অনুভূতি ভাগাভাগি করা, সমস্যা হলে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা, এবং একে অপরকে সময় দেওয়া—এসব বিষয় সম্পর্ককে দৃঢ় করে। এছাড়া পারস্পরিক সম্মান, মানসিক সমর্থন ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করাও দাম্পত্য জীবনে পরকীয়া ঠেকাতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
পরকীয়া কোনো একক কারণে ঘটে না। অসন্তুষ্টি, কৌতূহল, রাগ, প্রতিশোধ কিংবা ক্ষমতার লোভ—সব মিলিয়েই মানুষ এমন সম্পর্কে জড়ায়। তবে এটাও সত্য, পরকীয়া সাময়িক আনন্দ দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তা প্রায় সবসময়ই কষ্ট ও ভাঙনের কারণ হয়। তাই সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য প্রয়োজন বোঝাপড়া, ভালোবাসা এবং একে অপরের প্রতি অটল বিশ্বাস।
আরও পড়ুন
চোখে কেন আঞ্জনি হয়? কী করলে মিলবে মুক্তি?
দুধের সঙ্গে খেজুর খেলে যেসব উপকার হয় – জানলে অবাক হবেন!
অসতর্ক খাদ্যাভ্যাসে বিপদে পড়ছে তরুণ প্রজন্ম — স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি!
0 মন্তব্যসমূহ