বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সোমবার পৃথক দুটি বৈঠকে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে তিনি সম্প্রতি সমাপ্ত চীন সফরের অভিজ্ঞতা, সফরকালে সম্পন্ন কার্যক্রম এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সেনাপ্রধান। সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনীপ্রধান বিদেশ সফর শেষে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতিকে সফরের খুঁটিনাটি বিষয়ে অবহিত করে থাকেন। বৈঠকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিনি চীনে সামরিক সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়েও বিস্তারিত আলাপ হয়।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুর ১২টার দিকে সেনাপ্রধান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যান। সেখানে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠক হয়। এসময় চীন সফরের বিভিন্ন দিক ছাড়াও দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, উন্নয়ন কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সমন্বিত প্রচেষ্টার বিষয়গুলো আলোচিত হয়। বৈঠক শেষে উভয় পক্ষই পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সরকারি সফরে চীন যান এবং ২৭ আগস্ট রাতে দেশে ফেরেন। সফরকালে তিনি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) স্থলবাহিনীর পলিটিক্যাল কমিশনার জেনারেল শেন হুইসহ একাধিক উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আলোচনায় সামরিক প্রশিক্ষণ বিনিময়, প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এই সফরকে বাংলাদেশ-চীন সামরিক সম্পর্ক জোরদারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এর আগে রবিবার সেনাপ্রধান দেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের কার্যক্রম এবং কিছু সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের এই বৈঠকগুলো ছিল সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক এবং সৌজন্যমূলক। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এসব সাক্ষাৎ নিয়ে যেসব জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশ সফর শেষে রাষ্ট্রপতি ও সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের অবহিত করা সেনাপ্রধানের নিয়মিত দায়িত্বের অংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সেনাপ্রধানের এই ধারাবাহিক বৈঠক কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিষ্টাচারের অংশ নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ইতিবাচক ভূমিকার প্রতিফলন। বিশেষত চীন সফরের পরপরই শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠকগুলো প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমানতালে সামরিক কূটনীতি চালিয়ে যেতে চায়।
সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের এই সাক্ষাৎগুলোকে রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি ও সৌজন্যের প্রতিফলন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এ ধরনের বৈঠক ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন
১. ক্ষমা চেয়ে আবেদন উমামা ফাতেমা
২.১৫ বছর বিএনপির জন্য লড়েছি, অথচ আজ তারাই আমাকে ধাক্কা দিল: রুমিন ফারহানা
৩.বিতর্কিত ভিডিও ফাঁস, বাধ্যতামূলক ছুটিতে বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত।
0 মন্তব্যসমূহ